ছবি পিটিআই।
ভ্যান নিয়ে বেরলে প্রতিদিন অন্তত তিনশো টাকা রোজগার হতো। আর সংসারের হাল ফেরাতে আমার স্ত্রী নানা অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার কাজ করত। কিন্তু লকডাউনের জেরে আমাদের দু’জনেরই রোজগার এখন প্রায় শূন্য। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চারজনের সংসার চালাতে খুব অসুবিধে হচ্ছে। শুনেছি ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন চলবে। এখন প্রতিদিনের খাবার কী ভাবে জোগাড় করবো তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। মেয়ে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ওর পড়াশোনার খরচও রয়েছে।
আগে রিকশা চালাতাম। টোটোর দৌরাত্ম্যে ইসলামপুর শহর থেকে রিক্সা উঠেছে অনেকদিন। সেই রিক্সা কেটে তৈরি করতে হয়েছে ভ্যান। ভ্যান চালিয়ে দিনে কমবেশি তিনশো টাকা আয় হয়। আর আমার স্ত্রী নানা অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার কাজ করে।
দু’জনের রোজগারে কোনওমতে চলে সংসার। কিন্তু এখন পরিস্থিতি একদম বদলে গিয়েছে। কোনও দোকানের পণ্য সামগ্রী টানবো, তারও উপায় নেই। রাস্তাঘাটে বের হতে ভয় লাগে যদি পুলিশ তুলে নিয়ে যায় তবে ছাড়াবে কে। আমরা তো ঘরে বসে থাকি না। পেটের তাগিদে বেরোতেই হয়। এখন ঘরবন্দি হয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। খাবারের চিন্তাও হচ্ছে। রেশন থেকে যতটুকু চাল মিলেছে তা দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু আনাজ পাব কোথায়। তার উপর অসুখ-বিসুখ তো রয়েছেই। তার খরচও তো কম নয়। পরিচিতদের কারও কাছে হাত পাতব সেই উপায়ও নেই। সবারই তো একই পরিস্থিতি। কেউ কাউকে ধার দিতে চাইছে না। দোকান থেকে বাকিতে নিতে পারছি না। এখন অনুষ্ঠান বন্ধ বলে স্ত্রীরও কোনও রোজগার নেই।
আমাদের মতো দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের জমানো পুঁজি বলে কিছুই থাকে না। যতটুকু টাকা পয়সা ঘরে রাখা ছিল, তার সবই এই কয়েকদিনে শেষ হয়ে গিয়েছে। ভয় লাগে এখন যদি কোনও অসুখ বিসুখ হয় তবে চিকিৎসার টাকা কোথায় পাব তা ভেবে।
বৃহস্পতিবার সকালে একবার বেরিয়েছিলাম একটি আনাজের দোকানের মাল দিয়ে আসতে। ১৩০ টাকা দিয়েছেন ওই দোকানি। এই টাকায় আর ক’দিন চলবে। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ২০০ টাকার বেশি লেগে যায়। এখন উপরওয়ালার দিকেই তাকিয়ে রয়েছি। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আর আমি ভ্যান নিয়ে বের হব রাস্তায়।