Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee

মমতা, অভিষেকের কাছে আবেদন করেও লাভ হল না! পাহাড়ে অজয়ের ‘হামরো’ ভাঙলেন অনীত

শনিবার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় যোগ দিলেন দার্জিলিং শহর লাগোয়া ঘুম জোড়বাংলো কেন্দ্রের জিটিএ সদস্য প্রোমোসকর ব্লোন এবং পুলবাজার বিজনবাড়ির কেন্দ্রের ভূপেন্দ্র ছেত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২২ ২০:৪১
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সা‌ধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ‘দল ভাঙানোর খেলা’ বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছিলেন দার্জিলিঙের হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ড। আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার প্রধান তথা জিটিএ-র চিফ এগজ়িকিউটিভ অনীত থাপা তাঁর দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন। অজয়ের সেই আশঙ্কাই শেষমেশ সত্যি হল। শনিবার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় যোগ দিলেন দার্জিলিং শহর লাগোয়া ঘুম জোড়বাংলো কেন্দ্রের জিটিএ সদস্য প্রোমোসকর ব্লোন এবং পুলবাজার বিজনবাড়ির কেন্দ্রের ভূপেন্দ্র ছেত্রী।

Advertisement

অনীতের হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নিয়ে হামরো গড়ে তোলার অন্যতম কাণ্ডারি প্রোমোসকর পরে বলেন, ‘‘আমি দল ছাড়িনি। আমায় বার করে দেওয়া হয়েছে। সে যা-ই হোক, মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই।’’ অজয়কে কটাক্ষ করেন অনীতও বলেন, ‘‘উনি চাইলে আমার দলে যোগ দিতে পারেন।’’

জল্পনা ছিল, ছটপুজোর পরেই অনীতের দলে যোগ দিতে পারেন প্রোমোসকর এবং ভূপেন্দ্র। দলের সম্ভাব্য ভাঙনের খবর স্বীকার করে ফেসবুক লাইভে এসে অজয় দাবি করেছিলেন, দল ভাঙানোর উদ্দেশ্য নিয়েই হামরো-নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করছেন অনীত। অভিযোগ করেছিলেন, বিরোধী দল ভাঙিয়ে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছেন অনীত। মমতা এবং অভিষেকের উদ্দেশে অজয় বলেছিলেন, ‘‘এ ভাবে দল ভাঙার রাজনীতি ঠিক নয়। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা দয়া করে দেখুন৷ বহু বছর পর পাহাড়ে গণতন্ত্র ফিরেছে। বিরোধী দল হিসাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হব, এটাই আমাদের কাজ। আবারও ডিক্টেটরশিপে (একনায়কতন্ত্র) চলে যাচ্ছে পাহাড়।’’

Advertisement

অবশেষে সব জল্পনার অবসান হল। শনিবার বিশাল আয়োজন করে প্রোমোসকর এবং ভূপেন্দ্রকে গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চায় নিয়ে এলেন অনীত। নতুন দলে যোগ দিয়ে প্রোমোসকর বলেন, ‘‘আমি এক জন জয়ী প্রার্থী। মানুষ আমায় জিতিয়েছেন। তাই, তাঁদের প্রতি আমার কিছু দায়দায়িত্ব রয়েছে। সেগুলো পূরণ করতে হবে।’’

দলবদলের জল্পনার মধ্যে প্রোমোসকর এবং ভূপেন্দ্রকে দল থেকে খাতায়কলমে বহিষ্কার না করলেও তাঁদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছিলেন অজয়। যাকে বহিষ্কারেরই শামিল বলেই ধরে নিয়েছিলেন প্রোমোসকর। যোগদানের পর তিনি বলেন, ‘‘আমি উন্নয়নের সঙ্গে আছি। অজয় আমার সঙ্গে কোনও কথা না বলেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। আমি প্রথমে দল ছাড়িনি। আমায় বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন, তা অজয়কে জিজ্ঞেস করা হোক৷’’

যদিও অজয় প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছেন, তিনি বহু বার প্রোমোসকর এবং ভূপেন্দ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। প্রোমোসকরকে ফোন করেছিলেন। ‘মেসেজ’ করেছিলেন। তার কোনও জবাব না পেয়ে তাঁর বাড়িতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু দলত্যাগীর নাগাল পাননি।

প্রসঙ্গত, বছর তিনেক আগে জিএনএলএফ থেকেই একসঙ্গে পথ চলা শুরু হয়েছিল অজয় এবং প্রোমোসকরের। পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরাও জানাচ্ছেন, দু’জনের মধ্যে বহু দিনের সম্পর্ক। একসঙ্গে তাঁরা সমাজকল্যাণমূলক কাজকর্মও করেছেন। সেই সূত্রেই জিএনএলএফ থেকে বেরিয়ে তাঁরা হামরো পার্টি গড়েন। হামরোর এক নেতার কথায়, ‘‘দু’জনে একে অপরের পরিপূরক ছিলেন এককালে। দল শুরুর প্রথম দিন থেকে অজয় পর্দার আড়ালে ছিলেন। সামনে থেকে কাজ করেছেন প্রোমোসকরই।’’ তাঁদের সম্পর্কে এই ভাবে ‘ছেদ’ হামরোর অনেক নেতাই ভাল চোখে দেখছেন না। অন্য এক নেতার কথায়, ‘‘প্রোমোসকর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তাঁর চলে যাওয়া বড় ধাক্কা তো বটেই। তবে সাংগঠনিক ভাবেই এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে আমাদের।’’

অনীতের বিরুদ্ধে একাধিক বার পাহাড়ে ‘স্বৈরতন্ত্র’ চালানোর অভিযোগ করেছেন অজয়। তা নিয়ে এত দিন অনীতকে সুর চড়াতে দেখা না গেলেও দুই হামরো নেতাকে নিজের দলে টেনে তিনি শনিবার বললেন, ‘‘বোর্ড গঠনের পর সব দলের জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গেই পরিচয় হয়। কথা হয়। তার মানে এটা নয় যে, আমি ওঁদের আমার দলে আসতে বলেছি। জিটিএ চিফ এগজ়িকিউটিভ হিসাবে সবার সঙ্গেই আমায় মিশতে হয়। প্রত্যেকের সঙ্গেই কাজকর্ম নিয়ে কথা বলতে হবে। এখন অনেকেই মনে করেন, যে দলের সমর্থন বেশি, সেই দল করাই ভাল। কেউ যদি উন্নয়নের স্বার্থে আমার দলে যোগ দিতে চান, তাঁকে কী ভাবে ফিরিয়ে দিই? যদি অজয় এডওয়ার্ডও আসেন, তাঁকেও স্বাগত।’’ এর প্রেক্ষিতে অজয়ের সঙ্গে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement