রামমন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে উত্তরের বড় একটা অংশের মানুষের উৎসাহের জেরে ব্যবসা সংক্রান্ত কাজকর্ম অনেকটাই কম হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের দিন রামপুজো, অর্চনায় মাতে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বড় অংশের মানুষ। এতে সে দিন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় বড়সড় প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
তাঁদের বক্তব্য, ওই দিন ব্যবসা বন্ধ না থাকলেও রামমন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে উত্তরের বড় একটা অংশের মানুষের উৎসাহের জেরে ব্যবসা সংক্রান্ত কাজকর্ম অনেকটাই কম হয়েছে। এর ফলে আর্থিক অঙ্কে ৫০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ।
যদিও একে ‘ক্ষতি’ না বলে একদিনের কম ব্যবসা বলেই সকলে দেখাতে চাইছেন। প্রতিটি শহরে সরাসরি কোথাও কোনও বন্ধের নোটিস না থাকলেও স্বতঃস্ফূর্ত কাজ বন্ধের জেরে ব্যবসা থেকে শুরু করে কলকারখানার উৎপাদন মার খেয়েছে, তা ভিতরে ভিতরে স্বীকার করছেন অনেকেই। প্রকাশ্যে অবশ্য বিশেষ কেউ কিছু বলছেন না। বণিক সভাগুলির অন্দরের হিসাব, সোমবার ৭০ শতাংশ ব্যবসা হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কম কাজ হয়েছে পাইকারি ব্যবসায়।
নর্থ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ‘‘বছরের একাধিক দিন ব্যবসা, বাণিজ্য বা কারখানা বন্ধ থাকে। সরকারি ছুটি থাকে। সোমবার এমন কিছু ছিল না। তবে মানুষের উন্মাদনা এতটাই ছিল, যার প্রভাব ব্যবসায় পড়েছে।’’ তিনি জানান, সব মিলিয়ে শিলিগুড়ি তো বটেই কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি বা মালদহের দিকেও কম ব্যবসা হয়েছে। সংস্থা খোলা থাকলেও কাজ হয়নি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শিলিগুড়িতে, নয়াবাজার-খালপাড়ায়। সেখানে কোনও ছুটি বা বন্ধ ঘোষণা না হয়নি। তবে ব্যবসায় ‘বিরাম বা বিশ্রাম’ দেওয়ার পরামর্শ ছিলই। তেমনিই, বিভিন্ন শহরের হার্ডওয়্যার থেকে ডিস্ট্রিবিউশন, ডিলারদের ব্যবসা কম হয়েছে। আবার, মাছ-মাংস থেকে ফল, আনাজের বাজারেও ৬০-৭০ শতাংশ কম ব্যবসা হয়েছে। বহু এলাকায় আমিষ খাবারের জিনিসপত্রের ব্যবসা কম হয়েছে।
বিভিন্ন শপিং মল এবং বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি লোকজন একেবারে কম ছিল। একমাত্র খুচরো ব্যবসায় কিছু সাড়া ছিল। বিশেষ করে পাঞ্জাবি, জামাকাপড়, শাড়ির সঙ্গে পতাকা, ব্যানারের ব্যবসা একদিনে ১০ শতাংশের মতো বেড়েছে।
বণিক সভার হিসাবে একদিনে শিলিগুড়ি-সহ বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে ৭০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হয়। সেখানে ৫০০ কোটির মতো ব্যবসা কম হয়েছে।
শিলিগুড়ির বিভিন্ন পাইকারি বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অফিস, গুদাম সবই খোলা ছিল। কিন্তু কর্মিসংখ্যা কম ছিল। পুজো অর্চনা, শোভাযাত্রায় সবাই ব্যস্ত ছিলেন। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, সিকিম, পাহাড়, বিহার বা নমনি অসমের লোকজন ব্যবসার কাজে আসেনি বললেই চলে। দিল্লি, হরিয়ানা, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য থেকে মালপত্রের পণ্যবাহী ট্রাকও কম ঢুকেছে। তবে একে কেউ বন্ধ বা ছুটির দিন হিসেবে ধরেননি।
দেশ বা রাজ্যস্তরের বণিক সভাগুলির তরফে সরকারি ভাবে কোনও সংগঠন এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে তাঁদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, রামকে ঘিরে উন্মাদনা থেকে ব্যবসায়ীরা আলাদা হতে পারেননি। তবে ওই দিনটিকে ক্যালেন্ডারে ছুটির দিন ঘোষণা করে দিলে বিপদ বলেই তাঁদের অভিমত।