চোপড়ায় তৃণমূল নেতা গুলিবিদ্ধ না ছুরিবিদ্ধ? — নিজস্ব চিত্র।
গুলি নয়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া কোটগছের তৃণমূল নেতা জাকির হুসেন। বৃহস্পতিবার রাতে আহত জাকিরকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেই সময় তৃণমূল দাবি করেছিল, গুলি করা হয়েছে জাকিরকে। একই দাবি ছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতাদেরও। তবে ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর পরিবারের বক্তব্য, নার্সিংহোম থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন, গুলি নয়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন জাকির। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে কোটগছে গুলি চলার কোনও ঘটনা ঘটেনি।
গুলি না ছুরি— তা নিয়ে ধন্দকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। জেলার বিজেপি নেতা সুরজিৎ সেন বলেন, ‘‘ধারালো অস্ত্রের আঘাতে যদি জাকির আহত হন সে ক্ষেত্রে তাঁর পোশাক রক্তে ভিজে যেত। ওটা যে গুলির ক্ষত তা যে কেউ বুঝবে। তৃণমুল আর প্রশাসন মুখ বাঁচাতে এ সব সাজাচ্ছে।’’
তৃণমূলের চোপড়া ব্লক সভাপতি প্রীতিরঞ্জন ঘোষ যদিও বিজেপির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। জাকির কারও কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। তা নিয়েই গোলমাল। আর গুলি চলা নিয়ে ধন্দ সম্পর্কে তাঁর দাবি, জাকির গুলিবিদ্ধ হননি, তা হাসপাতাল থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইসলামপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল জানান, বৃহস্পতিবার রাতে চোপড়ার কোটগছে কোনও গুলি চলার ঘটনা ঘটেনি। তবে এক জন ছুরিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। পেশায় স্কুলশিক্ষক জাকিরের বাড়ির লোকের দাবি, টাকা লেনদেনের নিয়ে গোলমালে তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা চলছে। তাঁদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে জাকির গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর পেলেও নার্সিংহোম থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে, গুলি নয়, জাকিরকে ছুরি মারা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে যদিও ইসলামপুরের তৃণমূল নেতা কৌশিক গুণ জানিয়েছিলেন, ঘির্নিঘাওয়ের অঞ্চল যুগ্ম সভাপতি জাকির হোসেন ওরফে জাকির মাস্টারকেই গুলি করা হয়েছে। কৌশিকের কথায়, ‘‘কে বা কারা জাকিরকে গুলি করেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।’’ বৃহস্পতিবার রাতে আহত জাকিরকে প্রথমে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে শিলিগুড়ির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জাকিরের পরিবারকে জানান, গুলিতে নয়, ধারালো কোনও অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন তৃণমূল নেতা।
ঘটনাচক্রে, বুধবার গভীর রাতে এই ইসলামপুর থানা এলাকাতেই একটি গ্রামে বোমার আঘাতে শাকিব আখতার নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যু হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ বেশ কয়েক জনকে আটক করে। ওই ঘটনায় ইসলামপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ তোলে নিহতের পরিবার। ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক করিম চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের দাবিও করেন। তার মধ্যেই এই ঘটনা।