কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম মালিক শাহরুখ খান। —ফাইল চিত্র।
নিলামে দল গুছিয়ে নিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। বিশেষ করে দ্বিতীয় দিন শেষ বেলায় স্লগ ওভারে ঝড় তুলে পর পর তিন জন ক্রিকেটারকে তুলে নিয়েছে তারা। পুরনো ক্রিকেটারদের মধ্যে কয়েক জনকে যেমন ফিরিয়ে নিল তারা, তেমনই বেশ কিছু নতুন ক্রিকেটারকেও দলে নিয়েছে। দলের সিইও বেঙ্কি মাইসোর রবিবার বলছিলেন, তাঁদের পরিকল্পনার কথা। সেটা দেখা গেল সোমবারেও। গত বারের আইপিএল জয়ী দলের মোট ১১ জনকে রেখে এ বারের দল তৈরি করেছে কেকেআর। সেই সঙ্গে পেয়ে গিয়েছে মিচেল স্টার্ক এবং ফিল সল্টের পরিবর্তও।
টপ অর্ডার
গত আইপিএলে কলকাতার হয়ে বেশির ভাগ ম্যাচে ওপেন করেছিলেন সুনীল নারাইন এবং ফিল সল্ট। এ বারে নিলামের আগেই নারাইনকে ধরে রেখেছিল কেকেআর। সল্টের পরিবর্ত প্রয়োজন ছিল কেকেআরের। সল্ট উইকেটরক্ষক এবং ওপেনার। তেমন এক জন ক্রিকেটারের জায়গায় কলকাতা এ বারে নিয়েছে কুইন্টন ডি’কককে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই বাঁহাতি ব্যাটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু উইকেটরক্ষক এবং ওপেনার হিসাবে কুইন্টন যথেষ্ট দক্ষ এবং তাঁর বয়স ৩১ বছর। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আইপিএলে ১০৭ ম্যাচে ৩১৫৭ রান করেছেন। দু’টি শতরানও আছে তাঁর। কুইন্টন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কও ছিলেন। কেকেআর চাইলে তাঁকে অধিনায়ক করতেই পারে। তৃতীয় ওপেনার হিসাবে দলে নেওয়া হয়েছে আফগানিস্তানের রহমানুল্লা গুরবাজ়কে। তিনিও উইকেটরক্ষক এবং ওপেনার। কেকেআরের হয়ে গত দু’টি মরসুমে খেলেছেন। এ বারে প্রয়োজনে তাঁকে খেলাতে পারে কেকেআর। কুইন্টন এবং গুরবাজ়ের মধ্যে এক জনের উপরেই থাকবে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব। ভারতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে লভনীত সিসোদিয়া রয়েছেন। তিনিও ওপেনার। ফলে একই রকমের তিন জন ক্রিকেটার রয়েছে কলকাতার।
ওপেনারদের সঙ্গে টপ অর্ডারে থাকবেন বেঙ্কটেশ আয়ার। ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দিয়ে তাঁকে নিয়েছে কেকেআর। তিন নম্বরে ব্যাট করতে পারেন, সেই সঙ্গে আবার বলও করতে পারেন। অলরাউন্ডার বেঙ্কটেশকে এত টাকা দিয়ে কেনায় ধারণা তাঁকে কেকেআর অধিনায়ক করবে। তিনি নিজেও নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। কেকেআর এখনও অধিনায়ক হিসাবে কারও নাম ঘোষণা করেনি। দেড় কোটি টাকা দিয়ে অজিঙ্ক রাহানেকে কিনেছে কলকাতা। অভিজ্ঞ ব্যাটারকে ওপেনার অথবা তিন নম্বরে খেলানোর সম্ভাবনা। তবে প্রথম একাদশে তিনি থাকবেন কি না তা বলা কঠিন।
মিডল অর্ডার
নিলামের আগে শ্রেয়স আয়ারকে ছেড়ে দিয়েছিল কলকাতা। ছেড়ে দিয়েছিল নীতীশ রানাকেও। মিডল অর্ডারে তাই ফাঁক তৈরি হয়েছিল। সেই জায়গায় কেকেআর এ বারে অঙ্গকৃশ রঘুবংশীর উপর ভরসা রাখছে। গত বার তিনি দলে ছিলেন। খেলেছিলেন কিছু ম্যাচ। এ বারের নিলামে তাঁকে ৩ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছে কেকেআর। ২০ বছরের তরুণ ব্যাটার ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন। মুম্বইয়ের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন। সেই সঙ্গে রভমন পাওয়েলকে কিনেছে কেকেআর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের এই ক্রিকেটার মিডল অর্ডারে খেলেন। তবে তাঁকে খেলাতে গেলে মাথায় রাখতে হবে বিদেশি কোটার কথা। এই দু’জনের মধ্যে এক জন খেলতে পারেন। সেই সঙ্গে থাকবেন আন্দ্রে রাসেল। তাঁকে নিলামে তোলেনি কেকেআর। মিডল অর্ডারে যেমন ব্যাট করতে পারেন, তেমনই প্রয়োজনে বল করতে পারেন। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার কেকেআরের বহু যুদ্ধের নায়ক। মিডল অর্ডার সামলাতে এ বারেও তাঁর উপর ভরসা রাখবে দল। রয়েছেন মণীশ পাণ্ডেও। অভিজ্ঞ ব্যাটার সব ম্যাচে সুযোগ না পেলেও কিছু সুযোগ পেতেই পারেন। ফিল্ডার হিসাবেও যথেষ্ট দক্ষ তিনি।
ফিনিশার
নিলামে নামার আগে এই একটা জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছিল কেকেআর। রিঙ্কু সিংহ এবং রমনদীপ সিংহকে ধরে রেখেছে তারা। দুই সিংহের দাপট দেখার অপেক্ষায় থাকবেন কেকেআরের সমর্থকেরা। রিঙ্কুকে ১৩ কোটি টাকা দিয়ে রেখেছিল কেকেআর। রমনদীপকে দিয়েছিল ৪ কোটি টাকা দিয়ে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রিঙ্কুর স্ট্রাইক রেট ১৪৯.১২ এবং রমনদীপের ১৭০.৯৯। শেষ বেলায় দ্রুত রান তোলার জন্য কেকেআরের ভরসা তাঁরাই।
স্পিনার
দু’জন স্পিনারকে দলে রেখেছিল কেকেআর। নারাইন যেমন ওপেন করতে পারেন, তেমনই দলের প্রধান স্পিনার তিনি। সেই সঙ্গে থাকবেন বরুণ চক্রবর্তী। তাঁদের দু’জনকেই ১২ কোটি টাকা দিয়ে রেখেছিল কেকেআর। নিলামের শেষ বেলায় মইন আলিকে কিনে নেয় তারা। ইংরেজ স্পিনার ব্যাটও করতে পারেন। তাঁকে চাইলে তিন নম্বরে ব্যাট করাতে পারে কলকাতা। আবার স্পিনার হিসাবেও কার্যকরী তিনি। নারাইনের পরিবর্ত হিসাবে খেলানোর জন্য এক জন বিদেশি স্পিনার দরকার ছিল কলকাতা। শেষ বেলায় সেই কোটা পূরণ করে ফেলল তারা। সেই সঙ্গে নিলামে তারা কিনল মায়াঙ্ক মরকন্ডেকে। ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে তাঁকে কিনে নিয়েছে কলকাতা। হয়তো প্রথম একাদশে জায়গা পাবেন না তিনি। তবে ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসাবে সুযোগ পেতেই পারেন। তবে তাঁর সঙ্গে দলে ঢোকার লড়াইয়ে থাকবেন অনুকূল রায়। তাঁকে ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনেছে কেকেআর। এক জন বাড়তি স্পিনার প্রথম একাদশে দলে রাখতে চাইলে মায়াঙ্ক অথবা অনুকূলকে সুযোগ দেওয়া হতেই পারে। সঙ্গে অভিজ্ঞ নারাইন এবং বরুণ তো থাকবেনই।
পেসার
হর্ষিত রানাকে ৪ কোটি টাকা দিয়ে রেখেছিল কেকেআরে। সেই সঙ্গে গত বার দলে থাকা বৈভব আরোরাকে নিলামে কিনেছে তারা। খরচ হয়েছে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। উমরান মালিককেও নিয়েছে কলকাতা। তাঁর গতি নজর কেড়েছিল আইপিএলে। তিন ভারতীয় পেসারের সঙ্গে দলে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার এনরিখ নোখিয়ে এবং অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার স্পেন্সার জনসনকে। গত বার মিচেল স্টার্ক দলে ছিলেন। এ বারে তাঁকে নেওয়ার চেষ্টা করেনি কেকেআর। সেই জায়গায় জনসনকে নিয়েছে ২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে। নোখিয়েকে নেওয়ার জন্য খরচ করেছে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। তাঁদের মধ্যে এক জনকে প্রথম একাদশে খেলাবে কেকেআর।
কলকাতার পুরো দল
বেঙ্কটেশ আয়ার (২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ), রিঙ্কু সিংহ (১৩ কোটি), বরুণ চক্রবর্তী (১২ কোটি), আন্দ্রে রাসেল (১২ কোটি), সুনীল নারাইন (১২ কোটি), এনরিখ নোখিয়ে (৬ কোটি ৫০ লক্ষ), হর্ষিত রানা (৪ কোটি), রমনদীপ সিংহ (৪ কোটি), কুইন্টন ডি’কক (৩ কোটি ৬০ লক্ষ), অঙ্গকৃশ রঘুবংশী (৩ কোটি), স্পেন্সার জনসন (২ কোটি ৮০ লক্ষ), রহমানুল্লা গুরবাজ় (২ কোটি), মইন আলি (২ কোটি) বৈভব আরোরা (১ কোটি ৮০ লক্ষ), অজিঙ্ক রাহানে (১ কোটি ৩০ লক্ষ) রভমন পাওয়েল (১ কোটি ৫০ লক্ষ), উমরান মালিক (৭৫ লক্ষ) মণীশ পাণ্ডে (৭৫ লক্ষ), অনুকূল রায় (৪০ লক্ষ) মায়াঙ্ক মরকন্ডে (৩০ লক্ষ), লভনীত সিসোদিয়া (৩০ লক্ষ)। সব হিসাব টাকায়।
কলকাতার সম্ভাব্য একাদশ
সুনীল নারাইন (বিদেশি), কুইন্টন ডি’কক (বিদেশি/উইকেটরক্ষক), বেঙ্কটেশ আয়ার, অঙ্গকৃশ রঘুবংশী, আন্দ্রে রাসেল (বিদেশি), রিঙ্কু সিংহ, রমনদীপ সিংহ, এনরিখ নোখিয়ে (বিদেশি), হর্ষিত রানা, বৈভব আরোরা এবং বরুণ চক্রবর্তী।