সব মিলিয়ে ১২ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তার পুরোটাই তিনি পঞ্চায়েতের উন্নতির জন্য দান করলেন পঞ্চায়েত প্রধান। —নিজস্ব চিত্র।
আগে ছিলেন সাধারণ গৃহবধূ। রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধাও পেতেন। এখন তিনি জনপ্রতিনিধি। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। তাই গত দু’বছর ধরে লক্ষ্মীর ভান্ডার বাবদ পাওয়া টাকা পঞ্চায়েতের উন্নতিকল্পেই দান করলেন মালদহের আখতারি খাতুন। কালিয়াচক-১ ব্লকের আলিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আখতারি জানান, লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে সব মিলিয়ে ১২ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তার পুরোটাই তিনি পঞ্চায়েতের উন্নতির জন্য দান করেছেন। প্রধানের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের অন্যান্য সদস্যও তাঁদের তিন মাসের ভাতার টাকা এলাকার উন্নয়ন তহবিলের জমা দিয়েছেন।
চলতি বছর ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কালিয়াচক-১ ব্লকের আলিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসকে পরাজিত করে তৃণমূল। পঞ্চায়েতের প্রধান হিসাবে এ বার নতুন মুখ আখতারিকে বেছে নিয়েছে ঘাসফুল শিবির। আখতারি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে ৫০০ টাকা করে আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছিল। মঙ্গলবার কালিয়াচকে একটি কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দুই বছরে জমানো ওই ১২ হাজার টাকার একটি চেক রাজ্যের সেচ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের হাতে তুলে দিয়েছি।’’ তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের ১৩ জন সদস্য তাঁদের তিন মাসের বরাদ্দ ভাতার টাকাও এলাকার উন্নয়ন তহবিলের জন্য মন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন।
আখতারি জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে তিনি তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসাবে কাজ করছেন। দল এ বার তাঁকে আলিনগর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রার্থী করেছিল। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। তার পর তাঁকে পঞ্চায়েতের প্রধান করেছে দল। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধান হওয়ার সুবাদে তো সরকারি ভাতা পাচ্ছি। তাই লক্ষ্মীর ভান্ডারের অর্থ নেওয়া অনুচিত বলে মনে হয়েছে। সেই কারণে এলাকার উন্নয়নের জন্য ওই টাকা পঞ্চায়েত তহবিলে তুলে দিলাম।’’ প্রধান জানান, তাঁর এলাকার রাস্তায় কোনও পথবাতি নেই। ওই টাকায় যাতে কিছু পথবাতি বসানো যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া যাবে।
আখতারির স্বামী মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ তৃণমূলের আলিনগর অঞ্চল কমিটির সভাপতি। স্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে তিনি বেজায় খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা আমাদের দলনেত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন রাজ্যবাসীর উন্নয়নের জন্য। কেন্দ্রীয় সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণের জন্য এলাকার উন্নয়নের কাজ থমকে যাচ্ছে। তাই দিদির পথে হাঁটার লক্ষ্যে এলাকার মানুষের উন্নয়নের রাস্তা, পথবাতি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র-সহ সার্বিক উন্নয়নে জোর দিয়েছি। বিন্দু বিন্দু যোগ করে এলাকার উন্নয়ন সচল রাখার জন্য এটা একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।’’
পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েতের সদস্যদের এ হেন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাবিনা। তিনি বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে মোট এক লক্ষ ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা ওই পঞ্চায়েতের উন্নয়ন তহবিলে যোগ হয়েছে। এ জন্য সবার প্রশংসা কাম্য।’’