মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে সরকারি বাংলো ছাড়া নিয়ে তৃণমূলের বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্রের মামলার শুনানি আপাতত মুলতুবি করে দিল দিল্লি হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ‘সংঘাত’ এড়াতেই এই নির্দেশ বলে জানালেন বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম প্রসাদ।
‘ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন’ কাণ্ডে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হন মহুয়া। এর অব্যবহিত পরে দিল্লির সরকারি বাংলো ছাড়ার জন্য কেন্দ্রের নোটিস পান তিনি। সম্প্রতি ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেন তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী। রিট পিটিশন দাখিল করে মহুয়া আবেদন করেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা পর্যন্ত যাতে তিনি সরকারি বাংলোয় থাকতে পারেন, সেই নির্দেশ দিক আদালত। মহুয়ার আইনজীবী জানান, যদি তাঁর মক্কেলকে সংশ্লিষ্ট সময়ের জন্য বাংলোয় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়, তা হলে বর্ধিত সময়ের জন্য প্রযোজ্য যে কোনও খরচ দিতেও প্রস্তুত। মঙ্গলবার বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম প্রসাদের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। তাতে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, মহুয়া লোকসভা থেকে তাঁর বহিষ্কারকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন। সেই মামলার শুনানি এখনও হয়নি। এখন সরকারি বাংলো নিয়ে যদি হাই কোর্ট কোনও নির্দেশ দেয়, তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপ্রক্রিয়া সঙ্গে সংঘাত হতে পারে। তাই আপাতত ওই মামলার শুনানি মুলতুবি রাখা হয়।
মহুয়ার উদ্দেশে বিচারপতির মন্তব্য,‘‘আপনি একটি রিট পিটিশন দায়ের করে সরকারি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। আবার অন্য মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। যদি শীর্ষ আদালত সেই মামলায় স্থগিতাদেশ দেয়, তাহলে এই বিষয়টির শুনানি হতে পারে।’’ হাই কোর্টের যুক্তি, এখনই বাংলো নিয়ে আদালত কোনও নির্দেশ দিলে সেটা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের শুনানির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বস্তুত, বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মহুয়ার মামলার শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আগামী ৩ জানুয়ারি সেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দিল্লি হাই কোর্ট ওই দিন পর্যন্ত মহুয়ার বাংলো-মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ৪ জানুয়ারি মামলাটি শুনবেন বলে জানান বিচারপতি। এই সময়ের মধ্যে কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতেও অস্বীকার করে হাই কোর্ট। অন্য দিকে, আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে মহুয়াকে বাংলো ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন মহুয়া। নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। এ সবের জন্য শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির থেকে উপহার নিয়েছেন মহুয়া। তৃণমূল নেত্রীর প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাইও অভিযোগ করেছিলেন যে, সংসদে নিজের মেল আইডির লগইন, পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়েছিলেন মহুয়া। সেখানে সরাসরি প্রশ্ন পাঠাতেন শিল্পপতি। যদিও মহুয়া ‘ঘুষ’ নিয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে সংসদে নিজের মেল আইডির লগইন, পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, অনেক সাংসদই এ রকম করে থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গত ৮ ডিসেম্বর সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। যার পাল্টা তৃণমূলের এই বলিয়ে কইয়ে নেত্রী জানিয়ে দেন, এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন। আগামী ৩০ বছর লোকসভার ভিতরে এবং বাইরে থেকে লড়াই করার কথাও বলেন।