তোলা-তর্কে দলত্যাগের হুমকি

তবে কাউন্সিলরদের এই হুঁশিয়ারির পরে মঙ্গলবার দুপুরে একটি সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা জহর মজুমদারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের একাধিক জেলা নেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০১:৫৬
Share:

কাটমানি নিয়ে দলের অন্দর থেকেই অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ আলিপুরদুয়ার পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলরদের একাংশ এ বার তৃণমূল ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিলেন। সোমবার রাতে তৃণমূলের জেলা পার্টি অফিসে দলের আলিপুরদুয়ার পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলরদের বেশ কয়েক জন নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। সেখানেই কথা ওঠে, দলের মধ্যেই প্রবীণ নেতা যে ভাবে কাটমানির প্রসঙ্গ তুলছেন, তাতে সম্মানহানি হচ্ছে। তাই ওই কাউন্সিলররা দল থেকেই পদত্যাগ করতে চান।

Advertisement

এই কাউন্সিলরদের দাবি, দলের এক প্রবীণ নেতা কাটমানি নিয়ে বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ তুললেও দলের বাকি জেলা নেতারা তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। ওই প্রবীণ নেতার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতেও উদ্যোগী হচ্ছেন না তাঁরা।

তবে কাউন্সিলরদের এই হুঁশিয়ারির পরে মঙ্গলবার দুপুরে একটি সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা জহর মজুমদারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের একাধিক জেলা নেতা। জহরবাবুই কাটমানি নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ এনেছেন।

Advertisement

এ বারের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে জয় পায় বিজেপি। এরপরই দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে কাটমানি, তোলাবাজি, জমি মাফিয়া ও পুকুর বোজানোর কাজে জড়িত থাকার ব্যাপারে অভিযোগ তুলে সরব হন তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জহর মজুমদার। গত সপ্তাহে কলকাতার নজরুল মঞ্চে দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি সভায় কাটমানি ও তোলাবাজির অভিযোগ তুলে সরব হন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর আলিপুরদুয়ারে কাটমানি নিয়ে দলের বিদায়ী কাউন্সিলারদের একাংশের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়ান জহর। এরই মধ্যে গত রবিবার গভীর রাতে জহরের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে।

সোমবার রাতে তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা পার্টি অফিসে নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠকে বসেন তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলরদের অনেকে। দলের এক বিদায়ী কাউন্সিলরের অভিযোগ, ‘‘জহরবাবু লাগাতার আমাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। অথচ, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর, সেই মিথ্যা কথার বিরোধিতাও কেউ করছেন না।’’ তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকেই বিশ্বাস করছেন, জহরবাবু যে অভিযোগ আনছেন, তা সত্যি। ওই কাউন্সিলর বলেন, ‘‘এই অবস্থায় আমাদের অনেকেই জহরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি দেন।’’ তবে তৃণমূলের টাউন ব্লক সভাপতি তথা বিদায়ী কাউন্সিলর দীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কোনও কাউন্সিলর দল ছাড়ার কথা বলেননি। বরং জেলা নেতৃত্ব এর বিরুদ্ধে মুখ না খুললে আমরা এ বার প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতে শুরু করব, সেটাই জেলার নেতাদের বলা হয়।’’

সূত্রের খবর, এরপরই এদিন দুপুরে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলররা। সেখানে উপস্থিত থেকে তৃণমূলের একাধিক জেলা নেতা জহরের বিরুদ্ধে মুখ খুলে দলের ওই প্রবীণ নেতা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করছেন বলে অভিযোগ করেন।

তৃণমূলের টাউন ব্লক সভাপতি দীপ্তর অভিযোগ, ‘‘একটি তথ্যে জানতে পারলাম, জহরের বাড়ির এক কাজের লোক পা দিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা বোমা নর্দমায় ফেলেছেন। নিজের দিকে সহানুভূতি টানতে তাঁর এই বোমার নাটক কিনা বুঝতে পারছি না।’’ যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পা দিয়ে বোমা ফেলা খুবই বিপজ্জনক। এমন কাজ কেউ করতে যাবেন কেন?

জহরের বক্তব্য, ‘‘বোমা নিয়ে আসলে কী হয়েছে তা পুলিশের তদন্তেই প্রমাণ হয়ে যাবে। আর আমি এখনও তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতির দায়িত্বেই রয়েছি। দলের সবাই সেটা ভাল ভাবেই জানেন।’’

স্থানীয় বাসিন্দারাও এই ঘটনায় হেস্তনেস্ত চাইছেন। তাঁদের অনেকে বলেন, জহরবাবু যে অভিযোগ তুলেছেন, তার ঠিকঠাক জবাব তৃণমূল নেতারা দিন, তা হলেই সমস্যা মেটে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement