থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে হামলার অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে মেয়ের। এই অভিযোগ তুলে তিনটি পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ উঠল গ্রামের ‘মাতব্বর’দের বিরুদ্ধে। এই ঘটনা উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার কুমারটোল গ্রামের।
অভিযোগ, কুমারটোলের বাসিন্দা বিজয় রায়, শ্যামল সরকার এবং রণজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। আরও অভিযোগ এ নিয়ে সালিশিসভাও বসিয়েছিলেন গ্রামের ‘মাতব্বর’রা। তাতেই স্থির হয়েছে, ওই তিনটি পরিবারকে একঘরে করা হবে। ওই তিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যদি কেউ কথা বলেন, তা হলে তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানান ওই তিন পরিবারের সদস্যরা। ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের উপর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের একটি মোটর বাইক জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে চোপড়া থানার পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে বিজয় বলেন, ‘‘ওরা কেন আমাকে একঘরে করেছে, তা আমি জানি না। ওরা আমাকে এ সব জানায়নি। আমি ছোট ব্যবসায়ী। বাজারে অনেকের থেকে আমি টাকা পাই। ওরা সেই সব লোকজনের কাছে গিয়ে বলছে, ‘তোমরা ওকে টাকা দেবে না। তা হলে তোমার জরিমানা হবে।’ এতে আমার ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। জমিজায়গা নিয়ে একটা পুরনো সমস্যা আছে। সে জন্যই মনে হয় করছে এ সব।’’
যাঁর কারণে এত কিছু, শ্যামলের সেই মেয়ে পূজা বলেন, ‘‘স্বামীর সঙ্গে আমার অশান্তির কারণে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। সে জন্যই পাড়ার লোকজন আমাদের একঘরে করেছে। ওদের অভিযোগ, আমার না কি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে। এখন আমাদের কোনও বিপদ হলে কী করব? গ্রামের লোকের পছন্দ নয় যে, আমি এই বাড়িতে আছি।’’
সালিশিসভায় উপস্থিত থাকা বিমলকৃষ্ণ বালা নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘আমরা সংসার জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। তাই আমরা সালিশি বসিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। কারণ গ্রামে আমরা বাস করি। এমন ঘটলে সমাজ কলঙ্কিত হবে। সমাজ দূষিত হবে।’’
অমৃত বিশ্বাস নামে ওই সালিশিতে উপস্থিত থাকা অন্য এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘ওই তিনটি পরিবার নানা খারাপ কাজকর্ম করছিল। ওদের শোধরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে ওরা শোধরায়নি। অনেকে গায়ে হাত দেবে ভেবেছিল। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়া যায় না। তাই ওদের সঙ্গে আমরা থাকি না।’’
বিষয়টি শুনে বিডিও সমীর মণ্ডল বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’