মন্ত্রী গৌতম দেব। ফাইল চিত্র।
আমন্ত্রণ ছিল না। তবু রাজ্যপালের সভায় পৌঁছলেন রাজ্যের তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী। আইনজীবীদের একটি সংগঠনের আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধন করতে শুক্রবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় লাটাগুড়িতে এসেছিলেন। আয়োজকদের অনেকেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যুক্ত। রাজ্যপাল কর্মশালায় বক্তব্য রাখবেন তা জানিয়ে ছাপানো আমন্ত্রণপত্রে রাজ্যের কোনও মন্ত্রীরই নাম ছিল না। এ দিন সকালে ঘড়ি ধরে সময়মতো কর্মশালার উদ্বোধন করে সস্ত্রীক রাজ্যপাল। অনুষ্ঠান শুরুর পরে হঠাৎই তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের নিয়ে সভাস্থলে চলে আসেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। আয়োজকরা তাঁকে মঞ্চে ডেকে নেন, বক্তব্য রাখতেও ডাকেন। রাজ্যপাল নিজের ভাষণের শুরুতেই গৌতম দেবের প্রশংসা করেন এবং গৌতমকে ‘রাজ্যের প্রতিনিধি’ বলে উল্লেখও করেন।
অতীতে শিলিগুড়িতে রাজ্যপালের সঙ্গে আমন্ত্রণ থাকা স্বত্ত্বেও একমঞ্চে যাননি গৌতম। তা হলে আমন্ত্রণ না থাকতেও লাটাগুড়ির বৈঠকে মন্ত্রী এলেন কেন?
তৃণমূল শিবিরের দাবি, মন্ত্রী আসলে জলপাইগুড়ি জেলার প্রতিনিধি। তাই এর আগে শিলিগুড়ির বৈঠকে যাননি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠকে দু’তরফের মধ্যেকার বরফ গলেছে। সেই বৈঠকের পরে রাজ্যের তরফে ইতিবাচক বার্তা দিতেই মন্ত্রী গৌতম দেবকে ‘পাঠানো’ হয়েছিল বলে দলেরই একটি সূত্রে দাবি। তৃণমূলের আর একটি অংশের মতে, নাগরিক আইন বোঝাতে বিজেপিপন্থী আইনজীবীদের শিবিরে রাজ্যপাল রাজ্যের সমালোচনা করতে পারেন এবং এমন কিছু মন্তব্য করতে পারেন, যা রাজ্যের পক্ষে অস্বস্তিদায়ক হতে পারে— এই আশঙ্কা ছিল। তাই রাজ্যপালকে একা মাঠ ছেড়ে না দিতেই গৌতম দেব হাজির হয়েছিলেন।
এ দিন আইনজীবীদের সামনে রাজ্যপাল বলেন, “সংবিধানের প্রধান হিসেবে আমি খুবই আহত হই যখন দেখি চারদিকে আপস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।” তিনি বলেছেন, “যে আমার কথা শুনছে না, সেই আমার শত্রু হয়ে যাচ্ছে। যে আমার কথা পছন্দ করে না, সে-ও আমার শত্রু। এই সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গের কী করে হতে পারে?’’
গৌতম পরে বলেন, “রাজ্যপাল যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলেছেন, তা এখন গোটা দেশের সামনে বড় সমস্যা। এর বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে লড়তে হবে।” তৃণমূলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে হিংসা নিয়ে রাজ্যপাল যা বলেছেন তার পাল্টা মন্ত্রী গোটা দেশের কথা তুলে ধরেছেন। পরে মন্ত্রী বলেন, “আমার আমন্ত্রণ ছিল না ঠিকই। কিন্তু আমি একজন আইনজীবী। তা ছাড়া এ জেলারও মন্ত্রী আমি। তাই সকলকে স্বাগত জানাতে এসেছিলাম।”