তিন দিন বন্দ থাকার পর খুলে গেলো চামুরর্চি চা বাগান। ছবি দীপঙ্কর ঘটক।
১১ শতাংশ হারে মিলবে বোনাস— শেষে এমনই চুক্তিতে তিন দিন বন্ধ থাকার পরে, ফের খুলল বানারহাটের চামুর্চি চা বাগান। ১৪ অক্টোবর চামুর্চি চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন, বাগান বন্ধ। অভিযোগ, বোনাস নিয়ে অসন্তোষের জেরে, বাগান বন্ধ করে চলে গিয়েছিলেন মালিক পক্ষ। ১৬ অক্টোবর জলপাইগুড়ির ডেপুটি লেবার কমিশনারের দফতরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। সে বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব ১৪ শতাংশ বোনাসে রাজি হন। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ ১১ শতাংশের বেশি বোনাস দিতে পারবেন না বলে জানান। শেষে ১১ শতাংশ বোনাস দেওয়া হবে, এই চুক্তিতে খুলে যায় বাগান। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বোনাস মিলবে ১৪ শতাংশই। আপাতত ১১ শতাংশ বোনাস দিয়ে বাগানের কাজকর্ম শুরু হবে। পরে, তিন শতাংশ বোনাস দেওয়া হবে।
অন্য দিকে, পুজোর বোনাস-জটে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মালবাজার ব্লকের সাইলি চা বাগান। সাড়ে ১৫ শতাংশ বোনাসে উভয় পক্ষের সম্মতিতে মঙ্গলবার থেকে খুলেছে সাইলি। কিন্তু নতুন করে ক্যারন ও সামসিং বাগান বন্ধ হয়েছে।নাগরাকাটার ক্যারনের ক্ষেত্রে পুজোর বোনাস নিয়েই সমস্যা দেখা দিয়েছে। মালিকপক্ষ ১০ শতাংশের বেশি দিতে রাজি না হলেও, ১৯ শতাংশের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে, গত সোমবার গভীর রাতে মালিক পক্ষ নোটিস দিয়ে বাগান ছেড়ে চলে যান। মেটেলি ব্লকের সামসিং বাগানও বন্ধ হয়েছে। মালিকপক্ষ বাগান আর চালাতে পারছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনকে এ কথা জানান বাগান কর্তৃপক্ষ। পুজোর মুখে সামসিং ও ক্যারন মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক জীবিকা নিয়ে সংশয়ের মুখে পড়লেন।
প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পরে, আট মাস আগে খুলেছিল আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের কোহিনুর চা বাগান। সেখানেও বোনাসের দাবিতে মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালন করা হল। চা শ্রমিকদের অভিযোগ, দুর্গাপুজো চলে এলেও মালিক পক্ষ বোনাস ঘোষণা না করায়, সোমবার বাগানে গেট মিটিং এবং মঙ্গলবার কর্মবিরতি করা হয়। কর্মবিরতির খবর পেয়ে কোহিনুর চা বাগানে পৌঁছন আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক। বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে, তিনি সমস্যার সমাধান করেন। বাগান কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, প্রায় ৮ মাসের বোনাস ১১.৫ শতাংশ হারে দেওয়া হবে। শ্রমিকেরাও আশ্বাস দিয়েছেন, আজ, বুধবার থেকে কাজ শুরু করার।
কালচিনি ব্লকের দলসিংপাড়া চা বাগানেও চলছে অচলাবস্থা। মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বাগান। যার প্রভাব পড়েছে বাগানের দুর্গাপুজোতেও। বাগান বন্ধ। বোনাস ও বেতন দুই-ই পাননি শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবে আয়োজন হবে পুজোর, তা নিয়েই চিন্তিত উদ্যোক্তারা। বন্ধ রয়েছে পুজোর মণ্ডপসজ্জার কাজও।
(তথ্য: কৌস্তভ ভৌমিক, সব্যসাচী ঘোষ, হিতৈষী দেবনাথ, সৌম্যদ্বীপ সেন)