—ফাইল চিত্র।
দার্জিলিং পাহাড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে এ বার প্রচার শুরু করলেন বিমল গুরুংপন্থীরা। রবিবার থেকে দার্জিলিং এবং কালিম্পঙের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট গ্রামসভা, দলীয় বৈঠকে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হওয়া শুরু করেছেন গুরুংপন্থীরা। এক দশকে পাহাড়কে বিজেপি কিছু দেয়নি বলে অভিযোগ করে তাদের বয়কটের ডাক দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যপালের সফর নিয়েও গুরুংপন্থীদের অভিযোগ, ‘বিজেপির হয়ে রাজনীতি করছেন রাজ্যপাল। সব সময় রাজ্যের বিরুদ্ধে কথা বলাটা রাজ্যপালের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দার্জিলিঙে এসেও তিনি সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাংবিধানিক পদের মর্যাদা রেখেই তাঁর এর থেকে বিরত থাকাটা প্রয়োজন।’
গুরুংপন্থী যুব মোর্চার সভাপতি প্রকাশ গুরুং বলেছেন, ‘‘বিজেপি বরাবর পাহাড়ের একটি দলকে সামনে রেখে খেলা খেলছে। কিন্তু পাহাড়ের জন্য কিছুই করেনি। সুকৌশলে তার দায় বর্তাচ্ছে স্থানীয় দলের উপর। এই দলটাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না।’’
তিনি জানান, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পরাস্ত করতে দলীয় সভাপতির নির্দেশে তৃণমূলকে জেতাতেই হবে। আলাদা রাজ্য তো দূরের কথা, পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ১১ জনজাতির তফসিলি জনজাতি হিসেবে স্বীকৃতি— কোনও কিছুই হয়নি। গত প্রায় এক দশকে পাহাড়ে যা হয়েছে, তা কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার এবং রাজ্যে তৃণমূল সরকারের জন্যই সম্ভব হয়েছে, জানান তিনি। সেখানে প্রতিশ্রুতি আর ভোটের আগে কিছু পাহাড়বাসীর মন ভোলানো ঘোষণা করে বিজেপি এ বারও জেতার পরিকল্পনা, অভিযোগ তাঁর।
আরেক ধাপ এগিয়ে সংগঠনের সহ-সভাপতি অনিল লোপচান বলেন, ‘‘বিজেপি তো শুধু রাজনীতি করে গেল। সাংসদ থেকে নেতারা আশ্বাস এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মানুষকে তা বুঝতে বলা হচ্ছে। আমরা যে ভুল করেছি, তা আর করতে চাই না।’’
পাহাড়ের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, নিজের পুরনো জমি উদ্ধারের পাশাপাশি পাহাড়বাসীর মধ্যে প্রভাব বিস্তারের কাজ শুরু করেছেন গুরুং। রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে থাকার জন্য বিজেপি বিরোধিতার সুর চড়িয়ে গুরুং সরকারের আরও কাছাকাছি আসতে চাইছেন। মোর্চার হয়ে বিনয় তামাং বা অনীত থাপা নয়, বিমল গুরুং-ই পাহাড়বাসীর একটা বড় অংশকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তা আগামী ভোটে গুরুংকে প্রমাণ করতে হবে। তাই বিজেপি বিরোধিতা পুজোর পর থেকে শুরু করে দেওয়া হল। এক দিকে বিনয়, অনীতের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সংগঠন গোছানো আর বিজেপি বিরোধিতা করে তৃণমূলের বেশি কাছে থাকাটাই গুরুংয়ের এখন লক্ষ্য। রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও তাই বলা হচ্ছে।
যদিও রাজ্যপালের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক দল বা নেতাদের কথা নিয়ে প্রয়োজন হলে মন্তব্য করা হবে। রাজ্যপাল পাহাড়ে তাঁর দ্বিতীয় অফিসে এসেছেন। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে রোজ দেখা করছেন, তাঁদের সমস্যার কথা শুনে তা যথাযথ স্থানে জানাচ্ছেন। আর বিজেপির সাংসদ রাজু বিস্তা জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে বরাবর আন্তরিক। কেন্দ্রীয় সরকার পাহাড় নিয়ে ভাবছে। আশা করা যায়, আগামী দিনে কেন্দ্রের তরফে ভাল কোনও ঘোষণা করা হবে।