সমর্থনে মিছিল। জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে। নিজস্ব চিত্র
বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা ধর্মঘট নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে চাপানউতর শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। আজ, শুক্রবার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার আগে, বৃহস্পতিবার কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে দু’পক্ষ ময়দানে নামে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিস, হাসপাতালে ধর্মঘট হবে বলে খবর। তবে ধর্মঘট যাতে না হয়, সে জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে রাজ্যের শাসক দল।
কোচবিহারে বৃহস্পতিবার থেকেই কোন কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলে যাবেন, কোন কোন সরকারি কর্মী অফিসে যাবেন, তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিকে, ধর্মঘট ভাঙতে ব্লকে ব্লকে নেতাদের ময়দানে থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক সমাজ মাধ্যমে লেখেন, ‘‘শুক্রবার স্কুল খোলা রাখার দায়িত্ব যেমন শিক্ষকদের, সমস্ত জনপ্রতিনিধিরা স্কুল সচল রাখতে উদ্যোগী হোন।’’ প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিজিৎ অবশ্য বলেন, ‘‘হুমকির বিষয় নেই। আমরা আবেদন রাখছি।’’ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়কদের অন্যতম অরুণকুমার দাসের অবশ্য, ‘‘হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে আন্দোলন সফল হবেই।"
দিনহাটায় সরকারি কর্মীদের দফতরে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। সিতাই ও এবং বক্সীরহাটের জোড়াইয়ে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের প্রচার-গাড়িতে হামলা চালানো হয় বলেও অভিযোগ।
জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতরে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে সভা করে তৃণমূলের কর্মী সংগঠন। ধর্মঘটের পক্ষে সভা করে কোঅর্ডিনেশন কমিটি। জেলার একাধিক স্কুলে বৃহস্পতিবারই শিক্ষক-শিক্ষিকারা ধর্মঘট সমর্থনের কথা জানিয়ে প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকাকে চিঠি বা স্মারকলিপি দেন। সেগুলি জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে পাঠানো হয়েছে। তৃণমূলের তরফে স্কুল ধরে ধরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আজ, শুক্রবার স্কুলে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কদমতলায় তৃণমূলের সব শিক্ষক সংগঠন সভা করে। তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি স্বপন বসাক বলেন, “পড়ুয়াদের কথা ভেবে সকলকে শুক্রবার স্কুলে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে।” ধর্মঘটে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির পরীক্ষা নিয়ে অসুবিধা হবে না বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।
কোঅর্ডিনেশন কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার অফিসের সময়ের আগে, তাঁদের সংগঠনের সদস্য সরকারি কর্মীরা মিছিল করবেন। তৃণমূলের সরকারি কর্মী সংগঠনের জেলা সভাপতি সঞ্জয় সিংহরায় বলেন, “আমরা শুক্রবার ঠিক সময়ে অফিসে যাব।” কোঅর্ডিনেশন কমিটির জেলা সম্পাদক মনোজিত দাস বলেন, “আমরা ধর্মঘট সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছি।’’
শিলিগুড়িতে ধর্মঘট সফল করতে রাস্তায় নামছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। বৃহস্পতিবার বাঘা যতীন পার্ক থেকে র্ধমঘটকে সফল করার দাবি জানিয়ে মিছিল হয়। সে জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতিও। আজ, শুক্রবার শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার স্কুল পরিদর্শকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কথা তাদের। অন্য দিকে, দফতরে তাদের সংগঠনের সদস্যদের একশো শতাংশ উপস্থিতি রাখতে আগ্রহী তৃণমূল সরকারি কর্মচারী সংগঠন।
যৌথ সংগ্রাম কমিটির ডাকে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে ডুয়ার্সকন্যার সামনে থেকে মিছিল, পথসভাও হয়। ১২ই জুলাই কমিটির আালিপুরদুয়ার জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক কমলাক্ষ চন্দ বলেন, “সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পাওয়া কর্মচারী ও শিক্ষকেরা ধর্মঘট সফল করবেন।” ডুয়ার্সকন্যা ও আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন সরকারি দফতরের সামনে ধর্মঘটের সমর্থন ও বিরোধিতায় পোস্টারও পড়েছে। তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি কৌশিক সরকার বলেন, “পড়ুয়াদের শিক্ষা দান, মিড-ডে মিল থেকে বঞ্চিত করে আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি না।’’ এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, “আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকার কর্মচারী ও শিক্ষকদের ডিএ না দিয়ে খেলা-মেলা নিয়ে ব্যস্ত। ধর্মঘটসফল হবেই।”