সৌরভ চক্রবর্তী।
‘উত্তরবঙ্গ সম্পর্কে যাঁরা জানেন না, তাঁরা সব ভুল তথ্য দিচ্ছেন’— ফেসবুকে এমনই মন্তব্য করে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন তৃণমূলের জলপাইগুড়ি সভাপতি ও আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। আজ, শনিবার দলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে বৈঠক করতে আসছেন। তার আগে সৌরভের এমন ফেসবুক পোস্ট থেকে তৈরি হয়েছে নতুন জল্পনা।
বৃহস্পতিবার রাতে এই পোস্টটি করেন সৌরভ। সেখানে তিনি ব্যক্তিগত ত্যাগের কথাও লেখেন। লেখেন, ‘এত কষ্ট করে সব করলাম, কলকাতা ছেড়ে সব ত্যাগ করে চলে এলাম। নিজের আয়, পরিবার, কাউকেই দেখিনি। তার পর সব মানব কেন?’ পোস্টের শেষাংশে একলা লড়াই করার কথাও রয়েছে। সৌরভ লিখেছেন, ‘আমার বাবা বলেছিলেন, তোকে একাই লড়তে হবে। লড়ব।’
সৌরভ ঘনিষ্ঠরা, এই পোস্টের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন। কিন্তু জলপাইগুড়ির তৃণমূল সভাপতির এই পোস্ট থেকে রাজনীতিকে দূরে রাখতে পারছেন না বেশিরভাগ লোকজন। এই নিয়ে সৌরভকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘জেলায় (জলপাইগুড়িতে) অনেক নেতার আচরণ যে মানুষ মানছেন না, সেটা দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জানিয়েছি। আমি জেলা সভাপতি। চেষ্টা করছি মানুষকে বোঝাতে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দিদি যদি সাহায্য করেন, তা হলে পরিস্থিতি অনেকটা ঘুরতে পারে।’’ আর নেত্রী সাহায্য না করলে? কিছুটা ধোঁয়াশা রেখেই সৌরভ বলেন, ‘‘তা হলে অন্য কিছু ভাবতে হবে।’’
অরূপ বিশ্বাসের জেলা সফরের আগে সৌরভ হঠাৎ এমন কথা কেন বললেন, তাই নিয়ে তোলপাড় জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল। প্রশ্ন উঠেছে, এ সব বলে কি তিনি তৃণমূল ছাড়ার প্রস্তাবনাই করে রাখলেন? সরাসরি জবাব দেননি আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক। তবে তিনি এ-ও বুঝিয়েছেন, এর আগে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এসেছেন তিনি। আবার দলবদলে বিজেপিতে গেলে সেটা মানুষ ভাল ভাবে না-ও নিতে পারে।
জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার, এই দুই জেলার তৃণমূলের লোকজন বলছেন, সৌরভ একসময়ে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। নেত্রীর সঙ্গে প্রথম যখন দূরত্ব বাড়ে, তখন একবার জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন মুকুল। সেই সময়ে কেউ তাঁর সঙ্গে সশরীর দেখা করতে যাননি। কিন্তু খাবারদাবার ঠিক পৌঁছে যায় তাঁর কাছে। কে বা কারা সেই কাজ করেছিল, তা এখনও রহস্য। সৌরভ অবশ্য বরাবরই দলীয় নেত্রীর প্রতি নিজের আনুগত্য জানিয়েছেন। দুই জেলার তৃণমূল কর্মীদের একাংশের কথায়, এখন সময় বদলেছে। লোকসভা ভোটে দলের ভরাডুবির পরে একাধিক বিধায়ক বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। বিজেপি নেতাদের অনেকে সেই জল্পনা উস্কেও দিচ্ছেন।