সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের কাজ নিয়ে সম্প্রতি নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বনবস্তির বাসিন্দাদের দাবি, এই প্রকল্পে বন সংক্ষণ আইন এবং বন অধিকার আইন মেনে কাজ হচ্ছে না। এই অভিযোগের আবহে এ দিন বনবস্তির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ না পাওয়া অবধি রেল প্রকল্পটির কাজ বন্ধ রাখার আর্জি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন সাংসদ রাজু বিস্তা।
পরে রাজু এই এলাকায় বিতর্ককে এড়িয়ে গিয়ে বনবস্তির যাবতীয় ক্ষোভ-বিক্ষোভের জন্য রাজ্য সরকারের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে বলেন, ‘‘রেল মন্ত্রক থেকে রাজ্য সরকার এই প্রকল্প বাবদ প্রাপ্য বকেয়া পেয়েছে। তারপরেও বনবস্তির বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। তাই আমরা বলছি, আপাতত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়া অবধি রেল প্রকল্পটি বন্ধ রাখা হোক।’’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিজেপি সাংসদ বিস্তা দেখা করতে গিয়েছিলেন তফসিলি বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিমল গুরুংপন্থী মোর্চার নেতারা। মন্ত্রীর কাছে বিস্তা পাহাড়ের ১১টি জনজাতিকে তফসিলি জনজাতিভুক্ত করার দাবিও তোলেন। সম্প্রতি বিজেপিশাসিত কর্নাটকে এই দুই জনজাতিকে তফসিলি জনজাতিভুক্ত করা হয়। তার পরে বিষয়টি নিয়ে বিনয় তামাং কেন্দ্রীয় সরকারের জোর সমালোচনা করেন।
পাহাড় রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরা মনে করছেন, সেই ক্ষোভ কমাতেই এ দিন রাজু ফের জনজাতি প্রসঙ্গ তোলেন।
পরে সাংসদ জানান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীক তাঁকে জানিয়েছেন, একটি বিশেষ পরিদর্শনকারী দলও তিনি পাঠাবেন সেবক-রংপো প্রকল্প দেখতে। মন্ত্রীর কথায়, বন সংরক্ষণ আইন এবং বন অধিকার আইন না মেনে কাজ হচ্ছে বলে যে অভিযোগ এলাকার বনবস্তির বাসিন্দারা করেছেন, তাই খতিয়ে দেখা হবে। তিনটি গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবারকে কেবলমাত্র হুমকি দিয়ে তাদের বাসস্থান থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলেও
অভিযোগ। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন মামলাও দায়ের করেছেন তারা।
যদিও কালিম্পং জেলা প্রশাসন অধিকার লঙ্ঘণের বিষয়টি স্বীকার করেনি। প্রস্তাবিত ওই রেল প্রকল্পের কাজ এর
আগেও একবার পরিবেশকর্মীদের আপত্তিতে বন্ধ হয়েছিল। হিমালয়ান ফরেস্ট ভিলেজার্স অর্গানাইজেশন এবং উত্তরবঙ্গ জন-বন শ্রমজীবী মঞ্চ নামে দুটি সংগঠন অভিযোগ করেছে, বনাধিকার আইন বনাঞ্চলগুলিতে কার্যকর হয়নি। প্রচুর মানুষকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ে খুঁড়ে আবর্জনা রঙ্গিত এবং তিস্তায় ফেলা হচ্ছে।
প্রায় ৪০৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫ কিমি রেলপথের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার মধ্যে দিয়েই সিকিমের সঙ্গে জুড়বে রেল লাইনটি। দুই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, প্রস্তাবিত রেলপথের বেশিরভাগটাই পাহাড়ের সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাতে মানুষের উপর তার প্রভাব কম। মল্লি এবং রম্ভি এলাকায় ৩০টি পরিবার প্রভাবিত ছিল। তাদের মধ্যে ২৩টি পরিবার তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা
নিয়েছে। বাকিদেরও টাকা দেওয়া হবে।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘রাজ্য কী করছে, সেটা কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকার বুঝে নেবে। এই নিয়ে রাজু বিস্তাকে মাথা ঘামাতে
হবে না। তিনি বরং দেখুন, দার্জিলিংকে যে
সব আশ্বাস দিয়েছিলেন, তার কতটা পূরণ করতে পারলেন।’’