উনুন পরিষ্কার করছেন এক প্রাথমিক স্কুলের রাঁধুনি। ইংরেজবাজারে। নিজস্ব চিত্র
পাকা ঘরের এক কোণে রয়েছে মাটির উনুন। সে উনুন থেকে ছাই বার করছেন চল্লিশোর্ধ্ব এক মহিলা। এ দিকে, উনুনের পাশেই রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার ও লোহার বড় আভেন। গ্যাস থাকতেও কেন উনুন পরিষ্কার করতে হচ্ছে? মহিলা বলেন, “বাড়ির মতো এ বার স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নাও উনুনে করতে হবে।” পড়ুয়াদের মাথাপিছু বরাদ্দের টাকা গ্যাস সিলিন্ডারের পেছনে খরচ করলে তেল, নুন, আনাজ মিলবে কোথায় থেকে, উল্টে প্রশ্ন করেন তিনি। শুক্রবার এমনই ছবি দেখা গেল মালদহের যদুপুর ম্যানেজড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
শুধু যদুপুরই নয়, গ্যাসের দাম ১,২০০ ছুঁতেই মালদহের বহু স্কুলেরই মিড-ডে মিলের হেঁশেলে এখন ‘ঠাঁই’ হয়েছে মাটির উনুনের। এমন অবস্থায় মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে সরব হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে রাঁধুনিরাও। যদুপুর ম্যানেজড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম দাস বলেন, “আমাদের স্কুলে ৩৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তবে গড়ে ২০০ জনেরও বেশি পড়ুয়া হাজির থাকে। গ্যাসেই মিড-ডে মিলের রান্না হত। এখন যে ভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে,তাতে গ্যাসে রান্না করা সম্ভব হবে না।” মিড-ডে মিলের রাঁধুনি আরমানি বিবি বলেন, “মাথাপিছু বরাদ্দের সঙ্গে জ্বালানির দামও ধরা হয়। মাটির উনুনে রান্না করলে, গ্যাসের থেকে খরচ অনেকটাই কম পড়বে।”
প্রশাসনের দাবি, মালদহে মোট ৩,৩১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড-ডে মিল হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক, হাই স্কুলের পাশাপাশি, মাদ্রাসা, শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও রয়েছে। প্রাথমিকে ৫.৪৫ টাকা এবং উচ্চ প্রাথমিকের জন্য ৮.১৭ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া, ১৬ সপ্তাহের জন্য পড়ুয়াপিছু সপ্তাহে ২০টাকা বাড়তি বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি মাসেই সে বরাদ্দ শেষ হয়ে যাবে, দাবি কর্তৃপক্ষের।
এমন অবস্থায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে মিড-ডে মিলের সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষের বড় অংশ। তাঁদের দাবি, এখন ডিমের দাম প্রতি পিস সাড়ে ছয় থেকে সাত টাকা। প্রাথমিকে বরাদ্দের থেকে প্রায় এক টাকা বেশি। এর উপরে গ্যাস সিলিন্ডারের বর্ধিত খরচ রয়েছে। তাই গ্যাস সিলিন্ডারের বদলে এখন মাটির উনুনই ভরসা মিড-ডে মিলে। যদিও মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এক কর্তা বলেন, “মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়ে জেলা স্তরে কিছু করার নেই। তবে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”