India China Conflict

লাদাখের কিছু অংশ নিয়ে নতুন প্রদেশ দাবি চিনের! এ সব বরদাস্ত করা হবে না, বেজিংকে বলল দিল্লি

চিনের স্বশাসিত শিনজিয়াং অঞ্চলে সম্প্রতি দু’টি নতুন প্রদেশ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই প্রদেশ দু’টির কিছু অংশ লাদাখের মধ্যে পড়ে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে চিনকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে ভারত।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:০৪
Share:

চিনের দুই নতুন প্রদেশের দাবির প্রতিবাদে কূটনৈতিক বার্তা পাঠাল ভারত। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

লাদাখের কিছু অংশকে চিন নিজেদের বলে দাবি করায় প্রতিবাদ জানাল ভারত। বিদেশ মন্ত্রক থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, বেআইনি ভাবে চিনা দখলদারিকে কোনও ভাবেও মেনে নেওয়া হবে না। লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তে অচলাবস্থা কাটিয়ে সবে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতি হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চিনের দাবি ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধল লাদাখ সীমান্তে।

Advertisement

বিতর্কের সূত্রপাত গত ২৭ ডিসেম্বর। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, উত্তর-পশ্চিম চিনে দু’টি নতুন প্রদেশ তৈরি হয়েছে— হেয়ান প্রদেশ এবং হেকাং প্রদেশ। শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর স্বশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন এই দু’টি নতুন প্রদেশের কথা ঘোষণা করে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং স্টেট কাউন্সিলও এই দু’টি নতুন প্রদেশে অনুমোদন দিয়েছে বলে দাবি করা হয় সে দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যমে। এই দু’টি প্রদেশ পরিচালনা করা হবে হোতান শহর থেকে। চিনের দাবি করা এই দু’টি প্রদেশের মধ্যে পড়ছে লাদাখের কিছু অংশও। চিনের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যে বেজিংকে কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে দিল্লি।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, ওই ‘তথাকথিত প্রদেশগুলি’র একটি অংশ লাদাখের মধ্যে পড়ছে। ভারতীয় ভূখণ্ডে বেআইনি ভাবে চিনা দখলদারি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, “নতুন প্রদেশ তৈরির ফলে ওই অঞ্চলে আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। চিনের অবৈধ ভাবে কিংবা জোর করে দখল করাকেও বৈধতা দেওয়া হবে না। আমরা কূটনৈতিক স্তরে চিনকে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি।”

Advertisement

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এলএসি পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গালওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন।

গালওয়ান-কাণ্ডের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে দফায় দফায় বৈঠক শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চুশুল-মলডো পয়েন্টে দুই সেনার কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকে এলএসির কিছু এলাকায় ‘মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছোনো’ (ডিসএনগেজমেন্ট) এবং ‘সেনা সংখ্যা কমানো’ (ডিএসক্যালেশন)-র বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। কিন্তু প্যাংগং হ্রদ লাগোয়া ফিঙ্গার এরিয়া, ডেপসাং উপত্যকা-সহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে সমস্যা অমীমাংসিতই ছিল। সম্প্রতি সেই সমস্যারও সমাধানের বিষয়ে একমত হয় দু’দেশ।

লাদাখ সীমান্তে স্থিতাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর চিন সফরে যান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। চিনা বিদেশমন্ত্রী তথা বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে দুই দেশই সীমান্ত-বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত এবং পারস্পরিক ভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র সন্ধানের উপর জোর দেয়। দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়।

তবে ওই বৈঠকের নির্যাস কতটা প্রতিফলিত হবে, তা নিয়ে তখন থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ, অতীতে চিন এমন বেশ কিছু কাণ্ড ঘটিয়েছে। ১৯৬২ সালে ভারতীয় ভূখণ্ডে আগ্রাসন, ১৯৬৭-তে সিকিমের নাথু লা এবং চো লায় সংঘর্ষ, এমনকি ২০২০-র জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকাও চিনা পিপল্‌স লিবারেশন আর্মির আগ্রাসী চেহারা দেখেছে। এ বার যখন দু’দেশ লাদাখ সীমান্তে স্থিতাবস্থা ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে, তখনই আবার লাদাখের কিছু অংশকে জুড়ে নিজেদের নতুন প্রদেশ ঘোষণা করছে চিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement