বৃষ্টির পরে: (বাঁ দিকে) মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে শিলিগুড়িতে। তার জেরে জল ক্রমশ বেড়ে চলেছে মহানন্দা নদীতে। (ডান দিকে) পাহাড়ে ধসে গিয়েছে শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্সের মধ্যেকার রাস্তা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
টানা বৃষ্টির জেরে পরপর ধস নামল পাহাড়ের পথে। মঙ্গলবার রাত থেকে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ধস নামতে শুরু করে। ৩১ নং জাতীয় সড়কের সেবক কালীবাড়ি লাগোয়া এলাকায় ধস নেমেছে। ১০ নং জাতীয় সড়কের ২৯ মাইলে বড় ধস নামে। এ দিন বেলা বাড়তেই কালীঝোরার পর শ্বেতীঝোরাতে রাস্তার বেশিরভাগ অংশ ধসে তিস্তায় নেমে যায়। ফলে ওই পথে শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং, সিকিম, ডুয়ার্স এবং অসমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
দুপুরের পর সেবকে একমুখী ট্রাফিক চালু হয়। তাতে ডুয়ার্সের দিকে গাড়ি চললেও সিকিম, কালিম্পঙের দিকে যাতায়াত বন্ধ। মিরিকের রাস্তায় ধস নেমে দুপুর অবধি বন্ধ ছিল। পরে ধসের পাথর, কাদা সরিয়ে রাস্তা খোলা হয়েছে। একমাত্র কার্শিয়াং, জোরবাংলা হয়ে পেশক রোড, মংপু রোড দিয়ে তিস্তাবাজার এবং রম্ভিবাজার দিয়ে কিছু গাড়ি চলাচল করেছে। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে পূর্ত দফতরের কর্মীরা কাজ করছেন। শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি শহরেও নানা জায়গায় টানা বৃষ্টিতে জল জমে গিয়েছে।
এ দিন দার্জিলিং পুর এলাকাতেও পাঁচটি জায়গায় ধস নামে। জেলা হাসপাতালের পিছনের অংশেও ধস নেমেছে বলে সূত্রের খবর। পুর এলাকার ১৭ নম্বর এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিস্টার নিবেদিতা গ্রাম, হরিদাসহাট্টা, ইডেন হাসপাতাল, ওকডেন এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর পাশে মাটি ধসেছে, রাস্তা ভেঙেছে। দার্জিলিং শহর লাগোয়া রানিবান, সিংতাম চা বাগান এলাকায় প্রচুর বাড়ি, রাস্তার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। বৃষ্টি চলতে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মেরামতিতে সমস্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ধসের পাথর, মাটি সরানোর পরে আবার ধস নামছে। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক এস পুন্নমবল্লম বলেন, ‘‘কালিম্পং জেলার ১০ নং জাতীয় সড়কটি বন্ধ বলে শুনেছি। এদিকে পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বৃষ্টিতে কাজ কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। সমস্ত দফতর, বিভাগকে সতর্ক করে রাখা হয়েছে।’’
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা পরিস্থিতি বদল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারা জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ হালকা হয়ে মধ্যপ্রদেশের দিকে চলে যেতেই ফের পূর্ব উত্তরপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত একটি নতুন নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। তার জেরেই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের পাহাড় লাগোয়া ৫ জেলাতে ভারী থেকে অতি ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা জানান, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং কালিম্পং এবং পাহাড়ে বৃষ্টিপাত চলবে। দুই দিনাজপুর এবং মালদহে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাত এবং বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।