জলপাইগুড়ির ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে শরনার্থীদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীর দল হাজির জলপাইগুড়ির সীমান্তে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খেতে হল বিএসএফকে! যদিও শরণার্থীর দলকে কোনও ভাবে এ পারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। জ়িরো পয়েন্টেই আটকে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। বিএসএফ সূত্রে খবর, উপরতলায় বিষয়টি জানানো হয়েছে। সেখান থেকে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত শরণার্থীদের কোনও পরিস্থিতিতেই এ পারে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সীমান্তের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএসএফ সজাগ ও তৎপর।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার বেলা বাড়তেই জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধরধরা গ্রামের কাছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় জমাতে থাকেন শরণার্থীদের দল। বিকেল থেকে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ জমা হন সীমান্তে। বিএসএফের কাছে ভারতে প্রবেশের আর্জি জানাতে থাকেন তাঁরা। হলদিবাড়ি ছিটমহলের বাসিন্দা জয়প্রকাশ রায় বলেন, ‘‘মহিলারা আর্তনাদ করছেন। বাঁচান বাঁচান বলে চিৎকার করছেন। একটু আশ্রয় চাইছেন। এ দৃশ্য দেখা যায় না!’’ সন্তোষ রায় নামে আর এক জন বলেন, ‘‘ওঁরা (শরণার্থীর দল) রীতিমতো কান্নাকাটি করছে। চিৎকার করে বলছেন যে, ওঁরা ও পারে থাকতে পারছেন না।’’
এই সীমান্তটি কাঁটাতার বিহীন। চা বাগান দিয়ে ঘেরা। এলাকাবাসীরা জানান, শরণার্থীদের ভি়ড় বাড়তে দেখে তৎপর হয় বিএসএফ। প্রথম চা বাগান কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে গোটা এলাকা নিজেদের দখলে নেয় তারা। বিএসএফের তরফে শণার্থীদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার আর্জি জানানো হয়। তা সত্ত্বেও সেখান থেকে ফিরে যাননি শরণার্থীরা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে কয়েক জনকে সীমান্ত ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায়। কিন্তু রাত ৯টা পর্যন্তও সেখানে অনেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন বলে খবর স্থানীয় সূত্রে।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়ায় মহানন্দা নদীর পার ধরে বেশ কিছু এলাকা যেমন কাঁটাতার বিহীন, ঠিক তেমনই অবস্থা জলপাইগুড়ির হলদিবাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। যাকে বলে ‘অ্যাডভার্স পজ়িশন’। বিএসএফের তৎপরতা সেখানে সব সময়েই বেশি। বুধবার শরণার্থীদের ভিড় দেখে সেখানে আরও বাহিনী নিয়ে আসা হয়। গোটা এলাকায় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে এই পরিস্থিতিতে।
প্রত্যক্ষদর্শী আখারি রায় বলেন, ‘‘বাগানে কাজ করছিলাম। তখনই দেখি প্রচুর মানুষ জ়িরো পয়েন্টে এসে জড়ো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিএসএফের ফোর্স এসে তাঁদের আটকে দেয়।’’ হলদিবা়ড়ির বাসিন্দা তপন রায় বলেন, ‘‘এলাকায় সকালের দিকে কয়েক জন বিএসএফ জওয়ান ছিলেন। তার পর পরিস্থিতি বদলাতে থাকায় আরও ফোর্স ডাকা হয়। কিন্তু এপারে যাঁরা আসার জন্য আর্তনাদ করছেন, তাঁদের জন্য কিছু ভাবা উচিত সরকারের! তাঁরা অসহায় মানুষ।’’