প্রতীকী ছবি।
হাজার হাজার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের নাম নেই অসমের নাগরিকপঞ্জিতে। তার জেরেই আতঙ্কে কোচবিহারের অসংখ্য বাসিন্দা। ভূমিপুত্র হওয়ার পরেও কেন তাঁদের নাম বাদ, সে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেউ আবার পুরনো নথিপত্র খোঁজার কাজ শুরু করেছেন। অসমে তা নিয়ে আন্দোলনের পথেও গিয়েছে কোচ-রাজবংশীদের সংগঠন। ইতিমধ্যেই একদিন বন্ধ পালন করা হয়েছে। কোচ-রাজবংশী সম্মিলনী’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কোনওরকম শর্ত ছাড়াই ভূমিপুত্রদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা। সংগঠনের সারা অসম কার্যকরী সভাপতি রঘুরঞ্জন ব্যাপারি বলেন, “আমাদের হাজার হাজার ভূমিপুত্রের নাম নেই নাগরিকপঞ্জিতে। কোনওরকম শর্ত ছাড়াই প্রত্যেকের নাম ওই তালিকায় থাকতে হবে।”
সারা অসম জুড়েই কোচ-রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। বিশেষ করে নিম্ন অসম ধুবুরি, বিলাসিপাড়া, গোয়ালপাড়া, কোকরাঝাড়-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় কোচ-রাজবংশীদের লক্ষ লক্ষ মানুষ বসবাস করেন। সেই সব এলাকাতেই গ্রামের পর গ্রামের মানুষের নাম নেই নাগরিকপঞ্জিতে। অসমের পাশেই কোচবিহার। এই জেলা সহ প্রায় গোটা উত্তরবঙ্গেই রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস করেন। অসমের ওই অবস্থার কথা পৌঁছে গিয়েছে তাঁদের কানেও। একে কোচবিহারের বহু মেয়ের বিয়ে হয়েছে অসমে। সেই মেয়েদের একটি বড় অংশের নাম নেই নাগরিকপঞ্জিতে। তার উপরে রাজবংশী সম্প্রদায়ের বহু মানুষের নামও নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে আতঙ্ক। অনেকেই পুরনো নথি সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন।
কোচবিহারের বাসিন্দা, শিক্ষক শ্যামলকান্তি বর্মণ ওই অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, রাজবংশীদের নাম না থাকার খবর জানতে পেরে তিনি নথি সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। ১৯৭৪ সালের নথি পেয়েছেন তিনি। তার আগের কাগজপত্র এখনও পাননি। কোচবিহারের রেকর্ড রুম ১৯৭৪ সালে পুড়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও নথি সংগ্রহের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, “ভূমিপুত্রকে কেন নথি জমা দিতে হবে? আমরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করছি এই অঞ্চলে। এ ছাড়া আমাদের সম্প্রদায়ের অনেক মানুষের কাছেই নথি ঠিক মতো নেই। আমি ১৯৭৪ সালের নথি পেয়েছি। আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে। এটা মেনে নেওয়া যাবে না।”
কোচবিহার-জলপাইগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গেই রাজবংশী সম্প্রদায়ের বহু মানুষ বসবাস করেন। গ্রেটার কোচবিহার অ্যাসোসিয়েশনের বংশীবদন বর্মণ, কামতাপুর পিপলস পার্টির অতুল রায়’রা একসঙ্গে ভূমিপুত্র ঐক্যমঞ্চ তৈরি করেছেন। তাঁরা অবশ্য এনআরসির দাবি তুলেছেন। অতুল বলেন, “কিছু নাম কোনওভাবে বাদ পড়তে পারে। কিন্তু ভূমিপুত্রদের কারও নাম বাদ যাবে না এ বিশ্বাস আমাদের আছে। এখনও আবেদনের সময় রয়েছে অসমে। সেই আবেদনের মাধ্যমেই সবার নাম নাগরিকপঞ্জিতে রাখা হবে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলার কার্যকরী সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় রাজবংশী সম্প্রদায়ভূক্ত। তিনি বলেন, “মানুষকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ভূমিপুত্ররাও বাদ যায়নি। একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”