অনেক দিন পর বড় পর্দায় ফিরছেন শোলাঙ্কি রায়। ছবি: সংগৃহীত।
টলিপাড়ার পাশাপাশি মুম্বইয়েও পায়ের নীচের জমি শক্ত করতে উদ্যোগী শোলাঙ্কি রায়। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবি ছাড়াও সম্প্রতি এক সকালে নিজের কেরিয়ার, মুম্বই এবং টলিউড— দুই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে খোলা মনে কথা বললেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: আপনি কি সম্প্রতি গাড়ি চালানো শিখেছেন?
শোলাঙ্কি: হ্যাঁ। গাড়ি থেকে ‘লার্নার’ স্টিকারটাও এ বার খুলে ফেলতে হবে (হাসি)। কারণ আমি লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছি।
প্রশ্ন: টলিপাড়ার অভিনেত্রী নিজেই গাড়ি চালাচ্ছেন! সচরাচর দেখা যায় না...
শোলাঙ্কি: (হেসে) বিশেষ কিছু থাকলে, যেখানে নিজের গাড়ি চালাতে ইচ্ছে করে না, তখন হয়তো ড্রাইভার নিয়ে নিই।
প্রশ্ন: ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’র ট্রেলারের কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?
শোলাঙ্কি: খুবই ভাল। ইন্ডাস্ট্রির অনেকে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে মেসেজ করেছেন। এটা আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে।
‘ভাগ্যলক্ষ্মী’র একটি দৃশ্যে ঋত্বিক চক্রবর্তী ও শোলাঙ্কি রায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: তা হলে সমাজমাধ্যমে লেখার বাইরেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়?
শোলাঙ্কি: পাওয়া যায় তো। আমি তো পেয়েছি।
প্রশ্ন: প্রায় দু’বছর পর আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এতটা সময় লাগল কেন?
শোলাঙ্কি: কারণ মাঝে ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলাম। আর ধারাবাহিক মানে বড় দায়িত্ব, তখন অন্য কিছু করার সময় থাকে না। তাই ছবি থেকে একটু বিরতি নিই।
প্রশ্ন: তার পর তো মুম্বইয়ে চলে গেলেন...
শোলাঙ্কি: হ্যাঁ। নতুন শহর। নতুন অভিজ্ঞতা। একটা ওয়ার্কশপের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু তার পর শহরটার প্রেম পড়ে গেলাম। কাজের জন্যই মানুষের সঙ্গে আলাপ হল।
প্রশ্ন: ফিরে এসে এখানে কাজ করছেন। কিন্তু মুম্বইয়ে থেকে কী কী শিখলেন?
শোলাঙ্কি: অনেক কিছু। মুম্বই প্রতিভাকে মনে রাখে। এখনও কাস্টিং ডিরেক্টরদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। প্রতিযোগিতা থাকলেও ওখানে সকলের জন্যই কোনও না কোনও কাজ রয়েছে। পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই, সেটাও মুম্বই আমাকে শিখিয়েছে।
প্রশ্ন: টলিপাড়ায় শোনা যায়, পরিশ্রম নয় ‘গোষ্ঠী’ নাকি বেশি কাজে আসে?
শোলাঙ্কি: গোষ্ঠীবাজি সব জায়গায় রয়েছে। মুম্বইয়ে ‘স্বজনপোষণ’ রয়েছে, এখানে হয়তো ‘লবি’। মুম্বইয়ে আমাকে কেউ চেনে না। কলকাতায় আমি পরিচিত মুখ। সত্যি বলছি, কাজের জন্য এখানে ‘অন্য পদ্ধতি’র কোনও দিন সম্মুখীন হইনি।
প্রশ্ন: কিন্তু মুম্বইয়ে ‘খাকি ২’ ওয়েব সিরিজ়টা হাতছাড়া হল কেন?
শোলাঙ্কি: সবই ঠিক ছিল। শেষে একটা মতান্তর হয়। তার পর নির্মাতারাও চরিত্রটা নিয়ে হয়তো খুব একটা উৎসাহী হলেন না। সমস্যা নেই। নতুন কাজ এলে আবার করব।
প্রশ্ন: টলিপাড়ায় গত বছর মাত্র ৪৩টা বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে। এখানে কাজ কমে যাওয়ার জন্যই কি আপনাদের প্রজন্মের অনেকে মুম্বইয়ের পথে পা বাড়াচ্ছেন?
শোলাঙ্কি: আমার সেটা মনে হয় না। আমাদের এখানে ভাল অভিনেতা রয়েছেন। মুম্বই তাঁদের নিয়ে কাজ করতে চায়। এর মধ্যে তো কোনও দোষ নেই। আমার মনে হয়, এ বার অন্যের কাজে বাধা সৃষ্টি না করে আমাদের সমষ্টিগত ভাবে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ হিসেবে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: এখানে অন্যের কাজে বাধা মানে তো ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতি...
শোলাঙ্কি: অবশ্যই। কেন একজন প্রযোজককে বাংলা ছেড়ে মুম্বইয়ে ফিরে যেতে হবে? এত নিয়মের জটিলতা কেন, জানি না। আমার সঙ্গে মুম্বইয়ের প্রথম সারির একজন বাঙালি প্রযোজকের কথা হয়েছিল। তিনি কলকাতায় থেকে কলকাতার প্রেক্ষাপটে কলকাতার অভিনেতাদের নিয়ে একটা ছবি পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি।
প্রশ্ন: গত বছর ফেডারেশনের সঙ্গে পরিচালকদের সমস্যা তো অনেক সমস্যাই প্রকাশ্যে এনেছে। কী মনে করেন?
শোলাঙ্কি: দেখুন, সুজিত সরকার বা অনুরাগ বসু তো আমাদেরই মানুষ। তাঁদের কেন বাংলা থেকে খালি হাতে ফিরে যেতে হবে? আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না।
প্রশ্ন: ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’তে ঋত্বিক চক্রবর্তীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন। ঋত্বিকের মতো শক্তিশালী অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করার সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
শোলাঙ্কি: চ্যালেঞ্জ বলব না। আমি ভাল অভিনয় করে থাকলে, সেখানে ঋত্বিকদারও ভূমিকা রয়েছে। কারণ সহ-অভিনেতা অনেক সময়েই নিজের সেরাটা নিঙড়ে দিতে সাহায্য করেন। এই ছবিতে আমার ক্ষেত্রে ঋত্বিকদার উপস্থিতি সে রকমই।
প্রশ্ন: আপনার সমসাময়িক অভিনেত্রীদের মধ্যে অনেকেই মূল ধারার বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করছেন। সেখানে আপনার ছবি নির্বাচন খুবই আলাদা। এটা কি আপনার সচেতন সিদ্ধান্ত?
শোলাঙ্কি: না, বরং কিছুটা প্রস্তাব আসার উপর নির্ভর করে। বাণিজ্যিক ছবির চেহারাও কিন্তু আগের তুলনায় বদলেছে। রাজদার (পরিচালক রাজ চক্রবর্তী) ছবি খুব ভাল লাগত। গত বছর ‘বহুরূপী’ই দেখুন।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: একটা ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’ বা ‘কিশোরী’ গানে নিজেকে দেখতে ইচ্ছে করে?
শোলাঙ্কি: শিবুদাদের (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে আমার কেরিয়ারের প্রথম ছবি। গানটাও আমার পছন্দের। তাই হয়তো ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’কে বেছে নেব (হাসি)। আমি বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত।
প্রশ্ন: প্রায় ১০ বছর ছোট পর্দায় নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ধারাবাহিকে ফিরতে ইচ্ছে করে না?
শোলাঙ্কি: দেখুন, ধারাবাহিক মানে দীর্ঘ সময়ের দায়িত্ব। ১০ বছর পর আমি এখন একটু ক্লান্ত। নিজেকে এখন আরও একটু ভাঙতে চাইছি। নতুন কাজ করতে চাইছি। তাই এখনই ধারাবাহিকে ফিরতে চাইছি না।
প্রশ্ন: কিন্তু টিভি তো অভিনেতাকে নিরাপত্তা দেয়।
শোলাঙ্কি: কোনও দিন সেটা অস্বীকার করিনি। আমার নিজের যখন অর্থনৈতিক টানাপড়েন চলছিল, তখন দীর্ঘ দিন টিভিই আমাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। ঝুঁকি এবং সুরক্ষার মধ্যে আমি আপাতত ঝুঁকিকেই বেছে নিয়েছি।
প্রশ্ন: অভিনেতা সোহম মজুমদার আপনার ভাল বন্ধু। মুম্বইয়ে থাকাকালীন তিনি আপনাকে কী ভাবে সাহায্য করেছিলেন?
শোলাঙ্কি: ‘কবীর সিংহ’ থেকে মুম্বইয়ে সোহমের যাত্রা শুরু। অনেক অভিজ্ঞতা। সেগুলোই আমার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে। ওর থেকে আমি নিজে অনেক কিছু শিখেছি। সোহম আমার অনুপ্রেরণা। কিন্তু কোনও দিন ওর থেকে কাজের ক্ষেত্রে কোনও সাহায্য চাইনি।
প্রশ্ন: বন্ধু যখন ভাল কাজ করে, তখন কি মনের মধ্যে একটু হিংসে কাজ করে?
শোলাঙ্কি: একদম নয়। বন্ধুর ভাল কাজ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। যেমন তানিকা (অভিনেত্রী তানিকা বসু) শুনেছি ‘চালচিত্র’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছে। সোহমের মাধ্যমে ‘সিটাডেল’-এর অভিনেতাদের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক সেখানে নিজের কাজের জন্য কোনও ‘পিআর’ করিনি। ওই জায়গাটা সোহম খুব খেটে তৈরি করেছে। সেখানে ভাগ বসানোর কোনও মানে নেই।
প্রশ্ন: আপনার এবং সোহমের (‘পাটালীগঞ্জের পুতুল খেলা’) বাংলা ছবি এ বার একই দিনে মুক্তি পেল। কোনও কথা হয়েছে?
শোলাঙ্কি: খুব মজার বিষয়। আমাদের কথাও হয়েছে।
প্রশ্ন: একে অন্যের ছবির প্রিমিয়ার তো বদলে নিতে পারতেন।
শোলাঙ্কি: (প্রচন্ড হেসে) একবার ভেবেওছিলাম। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। তাই আর বিষয়টা নিয়ে এগোইনি।
প্রশ্ন: সোহমের সঙ্গে মুম্বইয়ে ছবির প্রদর্শনে গেলেন। বলা হল আপনারা সম্পর্কে রয়েছেন। আপনাকে নিয়ে যখন কোনও গুঞ্জনে সমাজমাধ্যম ভরে যায়, তখন তার সঙ্গে কী ভাবে লড়াই করেন?
শোলাঙ্কি: আমি মাথা ঘামাই না। কারণ অন্যের কথা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। কিন্তু পরিবার বা আমার কাছের মানুষদের কোনও সমস্যা হলে তখন আমি মুখ খুলি। পরিবারের যখন কেউ সেটা নিয়ে প্রশ্ন করেন, বা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন, তখন আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁদের বলি যে এগুলো গুজব। দয়া করে যেন তাঁরা বিশ্বাস না করেন।
প্রশ্ন: এর পর হাতে কী কী কাজ রয়েছে?
শোলাঙ্কি: ‘বিষহরি’ ওয়েব সিরিজ়টা মুক্তি পাবে। ওখানে আমার চরিত্রটা ভৌতিক রহস্যের সমাধান করে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটা নতুন কাজের কথা চলছে। কিন্তু কিছু চূড়ান্ত না হলে সেগুলো নিয়ে কথা বলা বারণ।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। ২০২৫ থেকে আপনার প্রত্যাশা কী রকম?
শোলাঙ্কি: আশা করছি ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’ দর্শকের পছন্দ হবে। পছন্দের পরিচালকদের সঙ্গে আরও বেশি কাজ করতে চাই। আর ব্যক্তিগত জীবনে আমি আরও বেশি শান্তি চাই। অতীতে অনেক নাটকীয়তার সাক্ষী থেকেছি। এখন একটু শান্তি চাই।