প্রতীকী ছবি।
কৃষি বিপণন দফতরের তরফে কেনা আলু এ বার বিলি করা হবে মিড ডে মিলে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান ও হুগলির হিমঘরে থাকা ওই আলু উত্তর দিনাজপুর জেলা বাদে মুর্শিদাবাদ সহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে জানুয়ারি মাসের মিড ডে মিলে বিলি হবে। কৃষি বিপণন দফতর সেই আলু সংশ্লিষ্ট জেলার ব্লকগুলিতে থাকা কৃষক বাজারে পৌঁছে দেবে এবং সেখান থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই আলু প্রতি কেজি ২৪ টাকা দরে কিনে নেবে। যে সমস্ত ব্লকে কৃষক বাজার নেই সেখানে ব্লক প্রশাসনের তরফে নির্দিষ্ট করা পয়েন্ট থেকে ওই আলু স্কুলগুলিকে কিনতে হবে। শিক্ষক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এখন যেখানে বাজারে নতুন আলু প্রতি কেজি ২৪ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে পুরনো আলু ২৪ টাকা কেজি দরে নেওয়ার মানে কি? হিমঘরে পড়ে থাকা আলু চালিয়ে দিতেই কি এই ব্যবস্থা? প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, এটা সরকারি সিদ্ধান্ত।
এ দিকে, এক সরকারি নির্দেশে স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে যে কৃষক বাজার থেকে স্কুলে আলু পরিবহণ ও প্যাকেজিংয়ে কেজি প্রতি ২ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আর তা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন জেলার শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কৃষক বাজার থেকে আলু কিনে স্কুলে পৌঁছতে পরিবহণ খরচ যেমন বেশি পড়বে, তেমনিই আলুর প্যাকেজিংয়েও খরচ রয়েছে। এ ছাড়া আলু মাপার জন্য স্কুলকে ওজন মাপার যন্ত্র ভাড়া করার পাশাপাশি এক জন শ্রমিককে কাজে লাগাতে হয়। ফলে প্রতি কেজিতে ২ টাকা খুবই কম। স্কুল সংলগ্ন বাজার থেকে আলু কিনলে এই সমস্যায় পড়তে হত না। মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘কৃষক বাজার থেকে স্কুল পর্যন্ত আলু নিয়ে যেতে পরিবহণ খরচ ও প্যাকেজিংয়ে কেজি প্রতি ২ টাকা সরকারি ভাবেই বরাদ্দ করা হয়েছে। এখানে জেলা প্রশাসনের কিছু করার নেই।’’
পুজোর পরে আলুর দাম যখন খোলাবাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি হয়েছিল সে সময় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি ভাবে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছিল কৃষি বিপণন দফতর। বিভিন্ন জেলার সদর এলাকা থেকে শুরু করে শহর ও ব্লকগুলিতেও স্টল থেকে এবং মোবাইল ভ্যানে করে সরকারি ভাবে সেই আলু বিক্রি হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম দামে ওই আলু কিনতে সরকারি স্টলগুলিতে ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়েছিল। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৩১ হাজার ৭৭০ মেট্রিক টন আলু কিনেছিল কৃষি বিপণন দফতর। সেই আলু রাখা হয়েছিল বর্ধমান ও হুগলির একাধিক হিমঘরে। খোলাবাজারে বিক্রি করার পরেও এখনও ৩ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন আলু সেই হিমঘরগুলিতে পড়ে রয়েছে। এ বার সেই আলুই বিলি করা হচ্ছে উত্তরের জেলাগুলির মিড-ডে মিলে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই আলু মূলত বিলি হবে উত্তর দিনাজপুর জেলা বাদে উত্তরবঙ্গের মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কালিম্পং জেলা এবং জিটিএ এলাকা ও শিলিগুড়ি মহকুমার স্কুলগুলিতে। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলার স্কুলগুলিতেও তা বিলি হবে। মালদহ জেলা এবং মুর্শিদাবাদ জেলার একাংশ এলাকার স্কুলগুলির জন্য আলু আসবে হুগলি জেলার হিমঘর থেকে, বাকি জেলাগুলির আলু যাবে বর্ধমান জেলার হিমঘর থেকে। মালদহ জেলার একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের সামগ্রী সরবরাহ নিয়ে এক এক মাসে এক এক রকম সিদ্ধান্ত চাপানো হচ্ছে। কোনও মাসে শিক্ষকদের বলা হচ্ছে আলু ও ছোলা বাজার থেকে কিনতে, আবার কোনও মাসে বলা হচ্ছে ছোলা সরকারি ভাবে সরবরাহ করা হবে। এ বার আলু কিনতে হবে কৃষি বিপণন দফতর থেকে কৃষক বাজারে গিয়ে। এ সব হয়রানি ছাড়া কিছুই নয়।’’