প্রতীক্ষা: মালদহ পোস্ট অফিসে আধার কার্ড সংশোধনের লাইনে বাসিন্দারা। দরজা খোলায় অপেক্ষায় খুদেরাও। ছবি: অভিজিৎ সাহা
বিরাট তালা ঝুলছে পোস্ট অফিস গেটে। শীতের আমেজ কেটে সকাল ৯টায় চড়া রোদ মাথার উপর। সেই রোদে বন্ধ তালার সামনে হাজার খানেক মহিলা-পুরুষের লম্বা লাইন। আধার কার্ড সংশোধনে শনিবার মালদহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজন ভিড় করেছেন মালদহ পোস্ট অফিসে।
লাইনের সকলের আগে ছ’মাসের মেয়ে মঞ্জুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ইংরেজবাজারের বুধিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাজেশ শেখ। কখন এসেছেন? রাজেশের জবাব, “রাত ২টো নাগাদ স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ২০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে এসেছি। গ্রামের ১৮ জন মিলে দেড় হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করে একসঙ্গে এসেছি।” পুরাতন মালদহের মহিষবাথানি থেকে ভোর ৪টে নাগাদ এসেও ২৭০ জনের পরে জায়গা পেয়েছেন জ্যোৎস্না বিবি। তিনি বলেন, “আধার কার্ডে আমার নাম ভুল আছে। তাই ভোররাতেই চলে এসেছি। সকালে এলে আরও লম্বা লাইনের পিছনে দাঁড়াতে হত।” তাঁর পিছনেই পুকুরিয়ার বাসিন্দা ফণীবালা মণ্ডল। তিনি বললেন, “আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডে নাম ভুল থাকলে চলবে না। নথি ঠিক না থাকলে দেশেই থাকা যাবে না। দেখলেন না, অসমে কী হল! তাই রাত জেগে বাড়ির কাজকর্ম ফেলে নথি ঠিক করাতে আসতে হল।”
অসমে এনআরসি চালু হওয়ার পর এ রাজ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মালদহে বেশি করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কালিয়াচক, মোথাবাড়ি, রতুয়া, হবিবপুর, বামনগোলা, পুরাতন মালদহে নথি ঠিক করার হিড়িক পড়ে গিয়েছে সরকারি অফিসগুলিতে। সম্প্রতি, কালিয়াচকে ব্লক অফিসে ভিড় সামাল দিতে পুলিশকে মাইকিং করতে হয়েছিল। এখন সেই ভিড় উপচে পড়েছে মালদহ পোস্ট অফিসে। পোস্ট অফিসের এক কর্তা বলেন, “উৎসবের মরসুমে আধার সংশোধনের কাজ বন্ধ ছিল। ফের কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কেও আধার সংশোধনের কাজ চলছে। তার পরেও মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন পোস্ট অফিসে।”
এ দিন পোস্ট অফিস থেকে লাইন পৌঁছে যায় প্রায় ৫০০ মিটার দূরে বৃন্দাবনি ময়দানে। মালদহের তৃণমূল নেতা আশিস কুণ্ডু বলেন, “এ দিন ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে দেখি পোস্ট অফিসের সামনে শীতের মধ্যেও কোলে বাচ্চা নিয়ে পুরুষ-মহিলারা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর সরকার সাধারণ মানুষের মধ্যে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক ধরিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে মানুষ অসহায় হয়ে সর্বত্র ছুটে বেড়াচ্ছেন।” এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক তৃণমূলই সৃষ্টি করছে বলে পাল্টা কটাক্ষ করেন উত্তর মালদহের বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনি বলেন, “এনআরসি নিয়ে সাধারণ মানুষকে অহেতুক তৃণমূল ভুল বোঝাচ্ছে। এখানে মানুষের হয়রানির কোনও বিষয় নেই।”