ব্যালট লুট, বুথ জ্যাম সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ এসেছিল জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির সোনাখালি প্রাথমিক স্কুলের বুথ থেকে। বেলা ১১টার পরে বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। কমিশনের পোর্টালে এবং জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে যত অভিযোগ এসেছিল, তার সব ক’টির ক্ষেত্রেই প্রশাসন রিপোর্ট দেয় ‘ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে’ বা ‘সব ঠিক আছে’ জানিয়ে। যার ফলে, ওই বুথে পুর্ননির্বাচন হয়নি। সে বুথেই ভোট দেওয়া ৪৭টি ব্যালট কলকাতা হাই কোর্টে জমা পড়েছে বৃহস্পতিবার। তাতেই মাথায় হাত প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের। অভিযোগ আসার পরেও ‘সব ঠিক আছে’ জানিয়ে রিপোর্ট দেওয়া বুথের ব্যালট হাই কোর্টে কী ভাবে পৌঁছল, ঘুরছে সেই প্রশ্ন। অভিযোগ পেয়ে ব্লক প্রশাসন আদৌও কি খতিয়ে দেখেছিল বিষয়গুলো, প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের অন্দরেই। আগামী ৩ অগস্ট ধূপগুড়ি ব্লকের পঞ্চায়েত ভোটের রির্টানিং অফিসার তথা বিডিওকে ডেকে পাঠিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ।
সাকোয়াঝোড়া ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই বুথে তৃণমূল প্রার্থী জিতেছেন মাত্র ১১ ভোটে। অথচ, ৪৭টি ছাপ মারা ব্যালট ভোটের পরের দিনই স্কুলের পাশের ঝোপ থেকে উদ্ধার হয় বলে দাবি সেখানকার কংগ্রেস নেতা নাজিবুল ইসলামের। কংগ্রেসের জেলা কমিটির সদস্য নাজিবুলের স্ত্রী সাহানাজ পরভিন সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। তিনিই মামলা করেছেন হাই কোর্টে।
নাজিবুলের অভিযোগ, ‘‘ভোটের দিন সাড়ে ১০টা নাগাদ তৃণমূলের গুন্ডারা এসে ব্যালট লুট করে। আমরা কয়েকটা ব্যালট উদ্ধারও করি। সে কথা প্রশাসনকে জানালেও, পদক্ষেপ করা হয়নি। ভোটগ্রহণ বন্ধও হয়ে যায়। বিকেলে হঠাৎ জানা যায়, আরও ভোট পড়েছে। সবাই দেখেছেন, ভোটগ্রহণ বন্ধ। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভোট পড়ে যায়।’’ নাজিবুলের আরও অভিযোগ, ভোট শেষের পরে তাঁদের এজেন্টদের সই না করিয়ে এবং ব্যালটবাক্স সিল না করেই নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর দাবি, ‘‘ভোটের পরের দিন ৪৭টি ব্যালট কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। সে কথা প্রশাসনকে জানালেও, কেউ কথা কানে তোলেননি।’’ নাজিবুলের আইনজীবী অজিতেশ পাণ্ডে বলেন, ‘‘বিডিওকে ডেকে পাঠিয়েছেন বিচারপতি। কমিশন ও প্রশাসনের রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে।’’
এ দিকে, সাকোয়াঝোড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই ‘জয়ী’ সিপিএম প্রার্থীকে জয়ের শংসাপত্র জমা দিতে বলে চিঠি পাঠিয়েছেন বিডিও। চিঠিতে জানানো হয়েছে, ভোট গোনায় ভুল হয়েছিল। বুথে দু’টি টেবিল থাকলেও আধিকারিক একটি টেবিলের ভোট গুণেই জয়ী ঘোষণা করেেন বলে দাবি।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না বলেও জানিয়েছেন জেলাশাসক। জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ দাবি করেন, ‘‘এ সব প্রশাসনের বিষয়। তারাই বলতে পারবে। তবে তৃণমূলকে কোথাও অন্যায় করে জিততে হয়নি। বিরোধীরা মিথ্যে নাটক করছে।’’