—প্রতীকী চিত্র।
উত্তরবঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এ বার লোকসভা ভোটে খাতা খুললেও, সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ ভোটারদের মতো স্থানীয় সরকারি কর্মীদের মন যে পায়নি, তা পরিষ্কার। কোচবিহার থেকে বালুরঘাট অবধি আটটি কেন্দ্রে শাসক দলের চেয়ে সরকারি কর্মীদের ভোটের নিরিখে ভাল ভোট পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৩৮,৬৪৮ পোস্টাল ব্যালটের ভোট পড়েছে। এগুলোর অধিকাংশই বা কিছু ক্ষেত্রে সবই সরকারি কর্মীদের ভোট। তাতে বিজেপি সাড়ে ২২ হাজারের মতো ভোট পেয়েছে। তৃণমূলের সংখ্যা ১৬ হাজারের কিছু বেশি। দক্ষিণবঙ্গে অবশ্য ছবিটা আলাদা।
রাজ্য সরকারের কর্মীদের একটা বড় অংশ যুক্ত থাকেন ভোট-প্রক্রিয়ার সঙ্গে। ভোট দেন পোস্টাল ব্যালটে। ভোটের আগে বিরোধীর মুখে বার বার ফিরে এসেছে ডিএ নিয়ে বঞ্চনার বিষয়টি। দেড় বছর পরে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। সেখানে উত্তরবঙ্গের সরকারি কর্মীরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিরূপ’ হয়ে ওঠায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে শাসক মহলে। ভোটের পরে কলকাতা থেকেও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করা হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মূলত কেন্দ্র এবং রাজ্যের মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) বৈষম্যের জেরেই সরকারি কর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুব্ধ’, এটা ভোটের তথ্যের ভিত্তিতে এমনই অনুমেয়। তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য গৌতম দেবের কথায়, ‘‘দলের তরফে পর্যালোচনা হবে। দলের ফলে কোথায়, কী হয়েছে, তা সবই খতিয়ে দেখা হবে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, বিজেপি আটটি কেন্দ্রে মোট পোস্টাল ভোটের মধ্যে ২২,৪২৫টি ভোট পেয়েছে। তৃণমূল পেয়েছে মাত্র ১৬,২২৩ ভোট। সরকারি ফেডারেশনের অনেক নেতাই মনে করছেন, সরকারি কর্মীদের ভোট শুধু পোস্টাল ব্যালটে নয়, তাঁদের পরিবারের ভোটেও প্রভাব ফেলেছে তা ধরেই নেওয়া যেতে পারে। আগামী বিধানসভার আগে ‘পরিস্থিতি’ না বদল হলে, শাসকের বিরুদ্ধেই যে সরকারি কর্মীদের ভোট পড়বে তা স্বাভাবিক। বিজেপির সরকারি কর্মীদের সংগঠন বলতে কার্যত কিছুই নেই। সেখানে তারা উত্তরবঙ্গে যা সমর্থন সরকারি কর্মীদের পেয়েছে তা উল্লেখযোগ্য। দার্জিলিং জেলা থেকে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার প্রত্যেক জায়গায় সেটাই হয়েছে। তবে কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গে শাসক দলের ফল অনেকটাই ভাল হয়েছে। সেখানে সরকারি কর্মীরা বিজেপির চেয়ে বেশি শাসক দলের উপর ভরসা করেছেন। রাজ্য সরকারই কর্মচারী ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা রাজ্য সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন এর মধ্যে অনৈক্য। তবে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ-র বিরাট ফারাক। সেটাই অসন্তোষের কারণ বলেই মনে হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চয়ই দেখা হবে।’’
তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের নেতারা অনেকে মনে করছেন, রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের ডিএ-র বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। আবার বেতন বৈষম্য, পদোন্নতি, ‘পোস্টিং’ নিয়েও দলের অন্দরে নানা বক্তব্য রয়েছে। তবে বাম আমলে সরকারি কর্মীরা যে ভাবে সরকারের পাশে থেকে সমন্বয় করে কাজ করতেন, তা এখন অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে না। আবার সংগঠনের মধ্যে মতানৈক্য, বিভেদ, গোষ্ঠী রয়েছেই। তাতে শাসক দলের সংগঠন যতটা শক্তিশালী থাকার কথা, তা হচ্ছে না বলে দাবি।