জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা। ফাইল চিত্র।
দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবি আদতে রাজনৈতিক দলগুলির ভোট আদায় ও চেয়ারে বসার ব্যবস্থা বলে মন্তব্য করলেন জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা। গত বুধবার দার্জিলিঙে বিভিন্ন জনজাতির বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে পাহাড়ের উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেন অনীত। সেখানে জিটিএ-র প্রধান সচিব ও অন্য সচিবেরা ছিলেন।
আলাদা রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করেই অনীতের বক্তব্য, ‘‘প্রত্যেক গোর্খার মতো আমরাও মনে কোণে আলাদা রাজ্যের বিষয় রয়েছে। কিন্তু আমি এলাকা ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে অন্যরকম চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। সুবাস ঘিসিংয়ের আমল ’৮৬ সাল থেকে গোর্খাল্যান্ডের দাবি চলছে। তাতে রাজনীতির লোকেদের জন্য পাবর্ত্য পরিষদ এবং জিটিএ-র চেয়ার এসেছে। তার বেশি কিছু নয়। আসলে আমরা ধাপে ধাপে এগোইনি কোনওদিনই।’’
অনীত জানান, পাহাড়ে কর্মসংস্থান, পানীয় জল, জমির পাট্টা, উন্নয়নের হিসেবে ভোটের যুদ্ধ হোক। ভোট এলেই আলাদা রাজ্যের জিগির তুলে বাজার গরম করা রাজনীতির শেষে পাহাড় যে আদতে কিছু পায়নি, তারই উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বেশিরভাগ বাড়ির ছেলেমেয়েরা বাইরে চাকরি করছে, পাহাড় বয়স্কদের দিয়ে ভরে যাচ্ছে। নিয়োগ কমিশনগুলি কার্যকরী হয়নি। সরকারি কর্মীরা অস্থায়ী। বাড়ি বানালেও ৮০ শতাংশ মানুষের জমির অধিকার বা পাট্টা নেই। সরকারের থেকে এ সব আগে বুঝে নেওয়াটা দরকার। জিটিএ সেই লক্ষ্যেই সব বোর্ড, সব জাতিকে একসঙ্গে নিয়ে কাজের চেষ্টা করছে।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বৈঠকে অনীত জানান, পাহাড়ের অস্থিরতা নিয়ে বাইরেও কথা হয়। কেউ বিনিয়োগ করার আগে দু’বার ভাবেন। তাঁদের আশঙ্কা, বন্ধ, গোলমাল বা বিস্ফোরণ হলে টাকা জলে যাবে। অনীত বলেন, ‘‘প্রথমে দরকার শান্ত সম্প্রীতির পাহাড়। তিন বছরে পরিবেশ পাল্টেছে। আরও পাল্টাতে হবে। তাতে কর্মসংস্থান বাড়বে।’’ আরও বলেন, ‘‘এখানে কাজ নেই। আছে শুধু আলাদা রাজ্যের দাবি তুলে নেতাদের চেয়ার দখলের চেষ্টা।’’
চলতি মাসেই মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাং প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে পাহাড়ের স্থায়ী সমাধানের দাবি তোলেন। গোর্খল্যান্ডের কথাও বলেছেন। এই অবস্থায় অনীত রাজ্যের দাবির প্রসঙ্গের বদলে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান নিয়ে বলা শুরু করেছেন। পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতারা জানান, বিমলের মোর্চা নেতানেত্রীরা অনেকেই বসে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ শান্তা ছেত্রীর উপস্থিতিতে কিছু এলাকার বিমল শিবিরের নেতানেত্রীরা তৃণমূলে যোগ দেন। যদিও পাহাড়ে তৃণমূলের অস্বিস্ত মিরিক বাদে কম। বিজেপির উপর চাপ রাখতে বিনয় টানা আলাদা রাজ্যের দাবি মনে করিয়ে দিয়ে চলেছেন। এতে পাহাড়ে শক্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব কিনা, সেটা সময়ই বলবে।