পিনাকীরঞ্জন সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
আবার অপেক্ষা। সেই সঙ্গে চলছে প্রার্থনাও। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সৌরযান ‘আদিত্য এল ওয়ান’ রওনা হবে শ্রীহরিকোটা থেকে। চন্দ্রযান-৩-এর মতো সেই অভিযানের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে বেশ কয়েক জন বঙ্গসন্তান। তাঁদেরই এক জন কোচবিহারের পিনাকীরঞ্জন সরকার। চন্দ্র অভিযানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন পিনাকী। সূর্যযান তৈরি এবং তা অরবিট পর্যন্ত পৌঁছনোর কাজ যে দল করছে, তার সদস্য পিনাকী। মহাকাশ বিজ্ঞানী পিনাকী ফোনে বলেন, ‘‘সূর্যযানকে সঠিক ভাবে অরবিট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া আমাদের কাজ। চন্দ্রযান বিক্রমের মতোই এই অভিযানেও সাফল্য আসবে বলে আমাদের আশা।’’
কোচবিহারে পিনাকীদের বাড়িতে সূর্যযানের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করছেন তাঁর মা কণিকা সরকার এবং বাবা বিধুরঞ্জন সরকার। দু’জনেই বলেন, ‘‘আমাদের খুব আনন্দ হচ্ছে। ছেলে এমন একটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন, যা নিয়ে গোটা দেশের মানুষ গর্ববোধ করেন। আমরা প্রার্থনা করছি চন্দ্রযানের মতো যাতে এই অভিযানও সফল হয়।’’
কোচবিহারের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁধীনগরে পিনাকীদের বাড়ি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পিনাকী ছয় বছর ধরে ইসরোতে কর্মরত। প্রাথমিকে অরবিন্দ পাঠভবনের ছাত্র ছিলেন পিনাকী। তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কোচবিহার জেনকিন্স হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রত্যেকটি বিষয়ে ৯৬ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন পিনাকী। এর পরেই আইআইএসটিতে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে পড়াশোনা করতে যান। সেখানেও ভাল ফল করেন তিনি। সেখান থেকেই ২০১৭ সালে ইসরোতে যোগ দেন। ২০১৯ সাল নাগাদ চন্দ্রযান-৩-এর ডিজ়াইন ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু হয়। সেই সময় থেকেই তার সঙ্গে ছিলেন পিনাকী। সূর্যযান প্রকল্পের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। একের পর এক রহস্যের সন্ধান করতেই ‘যান’ পাঠাচ্ছে ইসরো। পিনাকী জানিয়েছেন, পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে নির্দিষ্ট একটি বিন্দুতে দাঁড়িয়ে সূর্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে আদিত্য। আদিত্যের শরীরে সাতটি যন্ত্র বসানো রয়েছে। যে যন্ত্রের সাহায্যে সৌরঝড় ও সূর্যের অন্যান্য রহস্য সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করতে পারবেন।
জেনকিন্স হাইস্কুলের সহকারী শক্ষক সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘পিনাকীকে নিয়ে আমরা গর্বিত। ভাল ছাত্র ছিল ও। সেই সময় থেকেই আশা ছিল ও এক দিন বড় জায়াগায় যাবে।’’ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পিনাকীর বাবা-মা ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। পিনাকী ফিরবেন পুজোর সময়। তাঁর মা বলেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষাতেই রয়েছি।’’