সারিবদ্ধ: আধার কার্ড সংশোধনের লাইনে শিশু কোলে অপেক্ষা। মঙ্গলবার মালদহ গ্রামোন্নয়ন ভবনে। নিজস্ব চিত্র
আধার সংশোধনের লাইনে দাঁড়িয়ে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরের দিল্লির ভোটের খবর নিলেন অনেকে। মঙ্গলবার সকালে এমনই ছবি দেখা গেল মালদহ গ্রামোন্নয়ন ভবনের সামনে। প্রশ্ন ঘুরল, ভোটগণনা কি শুরু হয়েছে? কে এগিয়ে?
ঘণ্টাতিনেক ওই লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ড সংশোধন করেন মোথাবাড়ির সামিউল শেখ। দুপুরে গ্রামোন্নয়ন ভবন থেকে বেরিয়ে দিল্লিতে ‘আম আদমি পার্টি’র এগিয়ে থাকার কথা শুনেই তিনি বলেন, ‘‘এনআরসি, সিএএ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কোলের শিশুকে নিয়েই নথি ঠিক করতে লাইনে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা দাঁড়াতে হচ্ছে মহিলাদেরও। তারই জবাব মানুষ একের পর এক নির্বাচনে দিচ্ছেন।”
ওই লাইনে ন’মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কার্ডের তথ্য ঠিক করান কালিয়াচকের সুজাপুরের শেরাফুন বিবি। তাঁর কথায়, ‘‘আধার কার্ডে স্বামীর নাম ভুল রয়েছে। ওই ভুল তো আমরা করিনি। কার্ড তৈরির সময়ই তা হয়েছে। আর এখন হয়রানি হচ্ছে আমাদের।’’
এনআরসি, সিএএ-র কথায় নথি সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা মালদহে। কালিয়াচক থেকে হবিবপুর, বামনগোলা থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর— সব জায়গাতেই একই পরিস্থিতি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে জেলায় ৪০ লক্ষ মানুষের বসবাস। এখন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। প্রশাসনিক সূত্রেই খবর, প্রায় ৩০ শতাংশ আধার কার্ডেই ভুল রয়েছে। অভিযোগ, কারও কার্ডে জন্মতারিখ নেই, কারও কার্ডে অভিভাবকের নাম বা নামের বানান ভুল রয়েছে।
তার জেরে আধার কার্ড সংশোধনে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভিড় জমাচ্ছিলেন সাধারন মানুষ। তাঁদের হয়রানি কমাতে সোমবার থেকে মালদহের গ্রামোন্নয়ন ভবনে প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হয় আধার সংশোধনী কেন্দ্র। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, তিনটি কম্পিউটারে দিনে দেড়শো আধার কার্ড সংশোধন করা হবে। দ্বিতীয় দিনে সকাল ৬টা থেকেই গ্রামোন্নয়ন ভবনের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ভিড় নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই মোতায়েন ছিল পুলিশ।
পুলিশের এক কর্মী বলেন, ‘‘সকাল থেকে ডিউটি করছি। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকে আমাদের কাছেও দিল্লির ভোটের ফল জানতে চেয়েছেন।’’
কেন দিল্লির ভোট নিয়ে এমন আগ্রহ?
তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার বলেন, ‘‘বিজেপি মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। দিল্লির মতো এ বার বাংলার মানুষও বিজেপিকে জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন।’’
জেলা বিজেপি সভাপতি গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিজেপি নয়, রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তৃণমূলই। সিএএ নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।’’