গানের স্কুল চালিয়ে টানাটানির সংসারে বাবার হাতে মাস গেলে কিছু টাকাও তুলে দেন মৌমিতা
ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে মাত্র তিন বছর বয়সেই পঙ্গু তকমা লেগেছিল। হাঁটাচলা তো দূরের কথা, বিছানা থেকেও উঠতে পারতেন না। কে বলবে তাঁর গলার স্বর মানুষকে এমন মুগ্ধ করতে পারে! প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজ কলেজে যান রায়গঞ্জের মৌমিতা ঠাকুর। গানের স্কুল চালিয়ে টানাটানির সংসারে বাবার হাতে মাস গেলে কিছু টাকাও তুলে দেন তিনি।
সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থাতেই জন্মেছিলেন মৌমিতা। বয়স যখন ছ’বছর, মেয়েকে হাঁটানোর চেষ্টা করাতেন মা। ওই সময়েই মা দেখেন, ঠিক করে হাঁটতে পারছে না মেয়ে। ডাক্তারকেও দেখানো হয়। এর পরই মৌমিতার ডান থাইয়ে একটি সিস্ট ধরা পড়ে। বয়স যখন তিন, একটি অস্ত্রোপচারও হয়। মৌমিতার মায়ের কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচারের পর থেকেই বিছানায় শয্যাশায়ী হল মেয়ে। শুধু মাত্র ভুল চিকিৎসার কারণে। কী সময়ের মধ্যে দিয়ে যে গিয়েছি তখন, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’’
কিন্তু এখন মৌমিতা হাঁটতে পারেন। বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে গানের স্কুল চালান। অবসরে বাগান পরিচর্যাও করেন তিনি। এখন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করেন মৌমিতা। স্নাতকোত্তরের ছাত্রী তিনি। এ ছাড়াও একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলের বিনোদন বিভাগের সঞ্চালিকা তিনি। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে জয়ের রহস্য কী?
মৌমিতা বলছেন, ‘‘এক মাত্র সম্বল ছিল মনের জোর। আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে একটু আলাদা হওয়ার বোধ থেকেই হয়তো মনের জোর সঞ্চয় করা শুরু করেছিলাম। বাবা-মায়ের উৎসাহ তো ছিলই। আর ছিল গান। রবীন্দ্রনাথের গান। নিয়ম করে হাঁটার চেষ্টা, ব্যায়াম করাও শুরু করি। তার পর থেকেই দেখলাম, ডান পায়ে ধীরে ধীরে সাড়া পাচ্ছি।’’
নিজেকে ‘চার্জার’ বলতেই পছন্দ করেন মৌমিতা। তাঁর কথায়, ‘‘নিজেকে চার্জ না দিলে কোনও কাজই করতে পারব না। শুধু নিজেকে নয়, নিজের জীবন দিয়ে আমার মতো অন্যদের মনোবলও বাড়াতে চাই আমি।’’ কিন্তু অনুকম্পাবশত কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসুক তা মোটেই পছন্দ নয় মৌমিতার। তিনি বলছেন, ‘‘একটু আলাদা হলেও সবই কিন্তু পারি আমরা। নিজের কাজ নিজেরাই করতে জানি। হয়তো কিছু একটা নেই আমাদের। কিন্তু আমাদের যা আছে, তা অনেকেরই থাকে না। বিশেষ করে আমাদের মতো মনের জোর।’’