উদয়ন গুহ। —ফাইল চিত্র ।
লাল তৃণমূলীরাই তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছে। দলের পুরনো নেতাদের শরীরেও লাল রক্ত বইছে। ‘লাল’ এবং ‘সবুজ’ গোষ্ঠীর মধ্যে ‘দ্বন্দ্বের’ আবহে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের জনসভা থেকে বিরোধী ‘সবুজ’ গোষ্ঠীকে বার্তাও দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী।
লোকসভা ভোটে কোচবিহারে জয়ের পর থেকেই জেলায় তৃণমূলের দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছে। দলীয় সূত্রে খবর, এক পক্ষে রয়েছেন উদয়ন, জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, সাংসদ জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। আর অন্য পক্ষে রয়েছেন কোচবিহার তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এবং পার্থপ্রতিম রায়। ‘আদি নেতা’ রবি এবং পার্থ এখন দলে ‘সবুজ’ গোষ্ঠী বলে পরিচিত। অন্য দিকে, উদয়নেরা ‘লাল’ বলে পরিচিত এখন। কারণ, তাঁরা দল তৈরির সময় থেকে ছিলেন না। পরে এসেছেন। কেউ কেউ দল বদলেও এসেছেন। যেমন উদয়ন নিজে। ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে এসেছেন তিনি।
তৃণমূল নেতাদের ‘দ্বন্দ্বের’ আঁচে তেতে উঠেছে অনুগামীদের সমাজমাধ্যমের ‘দেওয়াল’ও! কোচবিহারে নিজেদের পছন্দের নেতাদের হয়ে সমাজমাধ্যমে ব্যাটন ধরেছেন অনুগামীদের অনেকে। পুরনো ভিডিয়ো, বক্তব্যকে হাতিয়ার করে হচ্ছে পোস্ট, পাল্টা-পোস্ট। সেই আবহে ‘লাল-সবুজ’ দ্বন্দ্ব নিয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিলেন উদয়ন। তিনি বলেন, ‘‘জেলার কিছু নেতা আমার নাম দিয়েছে লাল তৃণমূল। আমার শরীরের প্রত্যেকটা রক্তবিন্দু লাল। বিজেপি যখন আমার হাত ভেঙে দেয়, তখনও আমার শরীর থেকে লাল রক্ত ঝরেছে। রক্তের রং কখনও সবুজ হয়ে যায় না। ১৯৯৮ সালের তৃণমূলই হোক বা আমার মতো ২০১৫ সালের তৃণমূল, প্রত্যেকের রক্তের রং লাল।’’
মন্ত্রীর মতে, ‘‘যে লোকগুলো বছরের পর বছর বামফ্রন্টকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা মানসিকতা পরিবর্তন করে তৃণমূলকে ভোট না দিলে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতে পারত না। সেই সব ভোটারকে কি লাল তৃণমূল ভোটার বলা হবে? এটা কখনও হয় না।’’
উদয়নের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পার্থ বলেন, ‘‘২০১১ সালে তৃণমূল লাল পার্টির বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছিল। সেই সময় তৃণমূল স্তরের কর্মীরা নিজেদের রক্ত ঝরিয়ে দলকে ক্ষমতায় এনেছে। পরে অনেকেই দলে এসেছে। দলের ক্ষমতায় আসার পিছনে কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবং সেই সময় দল করা কর্মীদের। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।’’
তৃণমূলের দলীয় কোন্দল নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বোস বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে কোচবিহারে তৃণমূলে মহাভারত পর্ব চলছে। এক দিকে আদি তৃণমূল, আর এক দিকে নব্য তৃণমূল। নব্য তৃণমূলীরা আদি তৃণমূলীদের উপর রোলার চালাচ্ছে। যোগ্য সম্মান দিচ্ছে না। এটা চলুক। আমরা দেখি। আগামী দিনে তৃণমূল শূন্য হয়ে যাবে। মানুষ ওদের উপর আর ভরসা রাখতে পারছে না।’’