—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাতভর চেষ্টা করেও বৃহস্পতিবার থেকে দাপিয়ে বেড়ানো ছয়টি হাতির দলকে জঙ্গলে ফেরাতে পারেননি বনকর্মীরা। রাতের অন্ধকারে হাতির দল পৌঁছে যায় কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া শীতলখুচিতে। সেখান থেকে মাথাভাঙায় পৌঁছয় দলটি। সেখানে হাতির সামনে পড়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। জখম বেশ হয় কয়েক জন। বনকর্মীদের তাড়ায় হাতিগুলি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরে, আরও দুই মহিলাকে পিষে মারে হাতি। সব মিলিয়ে হাতির হামলায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন তিন জন। কোচবিহারের এডিএফও বিজন নাথ বলেন, ‘‘হাতিগুলিকে জঙ্গলে ফেরানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।’’ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। কোচবিহার পুলিশও ঘটনার দিকে নজর রেখে চলেছে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতির হামলায় যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা হলেন বুদেশ্বর অধিকারী (৫৯), আনন্দ বিশ্বাস (৬৫), জয়ন্তী সরকার (৪৬) এবং রেখারানি রায় (৬৮)। বুদেশ্বর ও আনন্দের বাড়ি শীতলখুচির টাউরিকাটা ও ভানুরকুঠিতে। বাকি দু’জনের বাড়ি মাথাভাঙা ২ নম্বর ব্লকের উনিশবিশায়।
বৃহস্পতিবার কোচবিহার সদর মহকুমার মোয়ামারি থেকে দিনহাটার মাতালহাটে পৌঁছয় ওই হাতির দলটি। বন দফতরের অনুমান, জলদাপাড়া বা চিলাপাতার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে তোর্সা নদী পেরিয়ে কোচবিহারে ঢুকে পড়ে দলটি। রাতভর চেষ্টা চালিয়েও হাতিগুলিকে ফেরাতে পারেননি বনকর্মীরা। শুক্রবার দিনহাটা থেকে শীতলখুচিতে পৌঁছয় হাতির দলটি। সাতসকালে শীতলখুচি ব্লকের বড় গদাইখোড়া এলাকায় তামাক খেতে কাজ করতে গিয়ে হাতির হামলার মুখে পড়েন আব্দুল মজিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি। শিবপুরে হাতির হামলায় মহম্মদ আলি নামে এক ব্যক্তি জখম হন। প্রত্যেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর পরে, গদাইখোড়া থেকে গাংধর হয়ে মাথাভাঙা ১ ব্লকের শিবপুরে ধরলা নদীর কাছে ছ’টি হাতির দল তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক সঙ্গে চারটি হাতি এক দিকে যায়। বাকি দু’টি দু'দিকে চলে যায়। এর পরেই মাথাভাঙা ২ ব্লকে ওই হাতির হামলায় দু’জনের মৃত্যু হয়। সূত্রের খবর, রেখারানি বাড়ির সামনে কাজ করছিলেন। সে সময় হাতি তাঁকে পিষে দেয়। জয়ন্তী সরকার ছেলেকে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে হাতির মুখে পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। হাতির হামলায় এক জন বনকর্মীও জখম হয়েছেন।
এই অবস্থায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, এমন ভাবে হাতি কোচবিহারের গ্রামে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা খুব কম। তাই আরও পরিকল্পিত ভাবে মাঠে নামতে হত বন দফতরকে। পাশাপাশি, হাতির গতিপথ ধরে গ্রামে-গ্রামে সতর্কবার্তা দিতে হত। তা হলে বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে। বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আচমকাই হাতির দলটি ঢুকে পড়ে কোচবিহারের গ্রামে। অল্প সময়ে সব রকম চেষ্টা চালানো হয়েছে। তার পরেও চার জনের মৃত্যু হয়েছে।’’
এ দিকে, হাতির তাড়া খেয়ে নদীতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের নতুন পাড়া এলাকার এক মহিলার। পুলিশ এবং বন দফতর সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে, জলদাপাড়ার জঙ্গলে আরও কয়েক জন মহিলার সঙ্গে কাঠ কুড়োতে যান জানকী রায় (৩৯)। সে সময়ে হাতি তাড়া করায় প্রাণ বাঁচাতে ওই মহিলারা শিসামারা নদীতে ঝাঁপ দেন। এর পরে থেকেই নিখোঁজ ছিলেন জানকী। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর দেহ নদী থেকে উদ্ধার করে সোনাপুর ফাঁড়ির পুলিশ।
মাদারিহাটেও হাতির হানায় মৃত্যু হয় রাজেন বর্মণ (৬০) নামে এক ব্যক্তির। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ থেকে ২০টি হাতির একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকের মধ্য খয়েরবাড়ির বর্মণপাড়ার একটি খেতে ঢুকে ধান খাচ্ছিল। স্থানীয়েরা টের পেয়ে হাতিগুলিকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। কয়েকটি হাতি পালালেও একটি হাতি আচমকা রাজেন বর্মণকে আক্রমণ করে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এক মাসের ব্যবধানে হাতির আক্রমণে চার জনের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
হাতির হানায়
ক্ষতি কৃষির
বারবিশা: কুমারগ্রাম ব্লকের বড় দলদলি এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে বক্সার জঙ্গল থেকে একটি দাঁতাল বেরিয়ে এসে নষ্ট করল কৃষি জমির ধান-সহ একাধিক জিনিস। এলাকাবাসীর অভিযোগ, লাগাতার হাতির হামলায় কৃষিকাজ প্রায় বন্ধের মুখে। দ্রুত এ নিয়ে বন দফতরের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে বন দফতরের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণের আবেদন জানালে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার ব্যবস্থা করা হবে।’’
নিজস্ব সংবাদদাতা