উজির শেখ
মুম্বইয়ের কালিয়ান স্ট্রিটে একটি দোকানে কাজ করতেন তিনি। লকডাউনে দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কাজ হারিয়ে অন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে ট্রাকে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন মালদহের পঞ্চানন্দপুর লোয়াইটোলা গ্রামের উজির শেখ। স্থানীয় সূত্রে খবর, বাড়িতে ফেরার পরে এলাকা বা আশেপাশে পছন্দের কাজ পাননি। অভিযোগ, জবকার্ড না থাকায় মেলেনি ১০০ দিনের কাজও। রেশনের চালেই কোনও রকমে চলছিল সংসার। রোজগারের আশায় গত রবিবার, মহরমের দিন এলাকার অন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে বাসে ফের মুম্বইয়ে ফেরেন উজির। পাঁচ হাজার টাকা বাস ভাড়া গুনতে হয় তাঁকেই। ধার করে নিয়েছিলেন সেই টাকা। কথা ছিল, কাজ করে সেই ধার মেটাবেন।
পারিবারিক সূত্রে খবর, শনিবার মুম্বইয়ের সেই দোকান পরিষ্কার করছিলেন উজির। আচমকা বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান তিনি। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন উজির। দুই সন্তানকে নিয়ে এখন সংসার কী করে চালাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না উজিরের স্ত্রী।
কালিয়াচক ২ ব্লকের পঞ্চানন্দপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের লোয়াইটোলা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ৩০ বছরের উজির। তাঁর স্ত্রী জেমি বিবি, দুই ছেলেমেয়ে। উজিরের বাবা বছরখানেক আগে মারা যান। তাঁরা পাঁচ ভাই, মা আমেনা বেওয়া পালা করে ৫ ছেলের কাছেই থাকেন। জেমি বলেন, ‘‘স্বামী ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কী করে সংসার চালাব ভেবে পাচ্ছি না।’’
কালিয়াচক ২ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি দুলাল শেখ বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অনেক কাজ করেছে বলে ঢোল পেটাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ছবিটা উল্টো। কোনও কাজ পাচ্ছেন না পরিযায়ী শ্রমিকরা। পেটের টানে বাধ্য হয়ে তাঁরা ফের ভিন রাজ্যের পুরনো কর্মস্থলে ফিরছেন।’’ তৃণমূলের মালদহ জেলা মুখপাত্র শুভময় বসু অবশ্য বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন্ রাজ্য থেকে বাড়ি ফেরাতে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল। প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিককে রেশন দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে আবেদন করলেই কাজ দেওয়া হচ্ছে।’’