টাইগার হিল থেকে। নিজস্ব চিত্র।
কোজাগরীর সারা বেলা ধরে উত্তরের আকাশে চলল কাঞ্চনজঙ্ঘা উৎসব। যার ‘রোশনাই’ ছড়িয়ে ছিল রায়গঞ্জ, ইসলামপুর থেকে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত। কোজাগরীর বিকেলে ওঠা গোল চাঁদ সারা রাত ধরে আকাশে জ্যোৎস্না ছড়াবে ঠিকই। কিন্তু লক্ষ্মীপুজোর সকাল থেকে উত্তরের আকাশে এতটা স্পষ্ট ভাবে তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ ধরা দেবে, এমনটা অনেক পরিবেশবিদকেই বিস্মিত করেছে।
বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। উত্তরবঙ্গের অনেকেই বলছেন, এই সময়ে পাহাড়ে বেড়াতে গেলে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। মাঝে মধ্যে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি থেকেও দেখা মেলে এই শৃঙ্গের। কিন্তু ডুয়ার্স, তরাই বা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং রায়গঞ্জের মতো দূরতর জনপদ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন? তিন-চার বছরে এক বার ঘটে কিনা সন্দেহ।
শুক্রবার সেটাই ঘটেছে। ইসলামপুর থেকে কোচবিহার, সর্বত্র মানুষ একটাই কথা বলেছেন, ‘‘এই দৃশ্য অভাবনীয়। মনে হচ্ছে যেন দার্জিলিঙে বসে আছি।’’ বিকেলে রায়গঞ্জ থেকেও আবছা দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাতেই খুশি বাসিন্দারা।
শুধু কি কাঞ্চনজঙ্ঘা, পুরো রেঞ্জটাই দেখা গিয়েছে এ দিন। পর্বাতোরোহী ভাস্কর দাস বললেন, “বাঁ দিক থেকে পরপর কোকতাং, জানু, রাথং, কাব্রু, সাউথ-নর্থ ডোম, তার পর কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্ডিম, জপুনো, সিম্ভু, নারসিং এবং সিনিওলচু। সব ক’টি শৃঙ্গই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।’’ এত দিন সাধারণত সকালেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গিয়েছে জলপাইগুড়ি থেকে। বেলা গড়ানোর পর তা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ বছর ‘উদার’ বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। কেন এত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাকে? নেপথ্যে চারটে শর্তের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, দিন কয়েক আগের বৃষ্টি বাতাসের সব ধুলোকণা পরিষ্কার করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই মুহূর্তে আকাশে মেঘ নেই। তৃতীয়ত, পাহাড়ে আকাশ পরিষ্কার, কুয়াশা নেই। সর্বোপরি, বাতাসে দূষণ কম। যেমন, শিলিগুড়িতে বাতাসের গুণগত মান গত বছর ছিল ১৪৯ একক, এ বছর মাত্র ১১৯। সে কারণে বাতাসে দৃশ্যমানতা বেড়েছে। যার জেরে দূরের কোচবিহার, রায়গঞ্জ থেকেও দেখা গিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।
অনেকেই এর জন্য দীর্ঘ লকডাউনকে একটি কারণ বলে দাবি করেছেন। লকডাউনের ফলে দূষণ কমেছে। বাতাসে ছোট-বড় সব ধূলিকণার পরিমাণই কম। তাই দিগন্তে কাঞ্চনজঙ্ঘার ভেসে ওঠাও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভার পরিবেশ সংক্রান্ত প্রকল্প আধিকারিক সৌহার্দ্য চক্রবর্তী বলেন, “লকডাউনের প্রভাব এ বছর অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। তাই এই ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে।’’ এরই মধ্যে আশঙ্কার কথা শুনিয়ে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা। তিনি বললেন, “দু’চার দিনের মধ্যেই আকাশে মেঘ আসছে। সমতলে বৃষ্টি এবং পাহাড়ে তুষারপাত হতে পারে। তখন কিন্তু এমন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে না।”