খুনি আসিফের গ্রামেই বাড়ি খাগড়াগড়ের পাণ্ডা জিয়াউলের, যোগাযোগ আছে? খুঁজছে পুলিশ

আসিফের দুই বন্ধুর থেকে উদ্ধার হয়েছে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি। জিয়াউলের সঙ্গে কি আসিফের কোনও যোগসূত্র ছিল? বিষয়টি আতসকাচের তলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালিয়াচক শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ১৬:১৬
Share:

জিয়াউল হকের পাড়ারই বাসিন্দা মহম্মদ আসিফ। —ফাইল চিত্র

কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডের পাণ্ডা মহম্মদ আসিফের সঙ্গে কি খাগড়াগড়-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত জিয়াউল হকের কোনও যোগসূত্র রয়েছে? এই প্রশ্নও এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

Advertisement

কালিয়াচকের যে পাড়ায় আসিফের বাড়ি, সেই পুরাতন ১৬ মাইল এলাকারই বাসিন্দা জিয়াউল। আসিফের বাড়ি থেকে জিয়াউলের বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে দু’শো মিটার। বর্তমানে জেলবন্দি জিয়াউল। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রে খবর, শিমুলিয়া এবং মকিমনগরের মাদ্রাসায় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের জঙ্গি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করত জিয়াউল। অন্য দিকে, আসিফের গ্রেফতারের পর তার দুই বন্ধুর থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বুলেট। জিয়াউলের সঙ্গে কি আসিফের কোনও যোগসূত্র ছিল? বিষয়টি আতসকাচের তলায় রেখেছেন তদন্তকারীরা।

রবিবার পুরাতন ১৬ মাইলের সেই গুরুটোলা এলাকায় দু’এক জনকে জিয়াউলের বাড়ির রাস্তা জিজ্ঞাসা করতেই ধেয়ে এল সন্দেহের দৃষ্টি। জিয়াউল সম্পর্কে তাঁরা মুখ খুলতে নারাজ। যদিও তার পরিবার নিয়ে সম্ভ্রমের সুর তাঁদের গলায়। কারণ এলাকায় ওই পরিবারটি ‘শিক্ষিত’ বলেই পরিচিত। পাঁচিল ঘেরা বাড়ি। গ্রিলের ওপারে দেখা মিলল জিয়াউলের বাবা মহম্মদ ফাহিউদ্দিনের। তিনি পেশায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। তাঁর বড় ছেলে মহম্মদ শাহিদ সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ছোট ছেলে মহম্মদ আবদুল্লার বাজারে আসবাবপত্রের দোকান। মেজোছেলে যোগ দিয়েছিল জিয়াউল তালিত গৌড়েশ্বর হাইস্কুলে, আরবি ভাষার শিক্ষক হিসাবে। অবশ্য জিয়াউল সম্পর্কে কোনও কথা বলতে চান না ফাহিউদ্দিন। এলাকায় আসিফ নামের ওই তরুণের কীর্তির কথা শুনেছেন ফাহিউদ্দিন। তবে বলে দিলেন, ‘‘আসিফের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ ছিল না। ও আমাদের বাড়িতে আসত না।’’

Advertisement

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটে। তার পর ওই কাণ্ডে উঠে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। শনিবার জিয়াউলের পাড়ায় দেহ উদ্ধারের ঘটনার পর রোজই নতুন নতুন তথ্য মিলছে ওই কাণ্ডের মূলপাণ্ডা আসিফকে ঘিরে। শনিবার রাতেই আসিফের দুই বন্ধুর থেকে উদ্ধার হয় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি। তাতে আসিফের জঙ্গিযোগের সম্ভবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পরিবারের সদস্যদের খুন করে আসিফ। এর পর, সাইবার অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১০ মার্চ পুলিশি জেরার মুখে পড়ে সে। কিন্তু সেই জেরায় সে ভেঙে পড়েনি। আসিফের এই ‘বিশেষ’ ক্ষমতাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।

আসিফ গ্রামে প্রচার করে দিয়েছিল, ওরা এলাকায় থাকবে না। সম্পত্তি বিক্রি করে চলে যাবে। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বলছেন, আসিফ বাংলাদেশ চলে যাবে বলে জানিয়েছিল। এই বাংলাদেশে পাড়ি দেওয়ার বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকে। এতগুলি জায়গা থাকতে বাংলাদেশে যাওয়ার কথা কেন আসিফ ভাসিয়ে দিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি, জমি, বাড়ি বিক্রির চেষ্টা করছিল আসিফ। এ জন্য সে এলাকার এক দালালের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। কিন্তু ওই দালাল আসিফের বাবার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে এড়িয়ে যেতে থাকে সে। তাতেই সন্দেহ হয় ওই দালালের। সে আসিফের দাদা মহম্মদ আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বাবা এবং মায়ের খবর পাননি। বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও জানান জমি, বাড়ির ওই দালাল। এর পর থেকেই আসিফের গতিবিধি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। সাহেবগঞ্জে মামারবাড়িতে থাকা আসিফের দাদাকে কালিয়াচক থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর গোটা বিষয়টি কিছু স্পষ্ট হয় তদন্তকারীদের কাছে। এর পর গ্রেফতার করা হয় আসিফকে। রবিবার আসিফকে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতে পঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অস্ত্র আইনে ধৃত তার ২ বন্ধু সাব্বির আলি এবং মাহরুফ আলিকে ৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement