বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ়-জ়ামান। ছবি: রয়টার্স।
ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামান। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, সাধারণ মানুষ যেন মনে না করেন যে বাংলাদেশের উপর কর্তৃত্ব করছে ভারত। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। তাঁর মতে, বাংলাদেশের জন্য ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশ অনেক বিষয়েই ভারতের উপর নির্ভর করে। আবার ভারতও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের থেকে সুবিধা পায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের কথায়, “এটা একটা দেওয়া–নেওয়ার সম্পর্ক।” পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
জেনারেল ওয়াকারের বক্তব্য, বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে এমন কিছু করবে না, যা সেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী। তিনি চান, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিও যাতে তা বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী কিছু না করে। সরাসরি কোনও প্রতিবেশীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “সীমান্তে আমাদের লোকজনকে হত্যা করবে না। আমরা প্রাপ্য জল পাব। এতে তো কোনও অসুবিধা নেই।”
বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের মতে, বাংলাদেশ এবং ভারত দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন। তাঁর মতে, ভারতের অনেকেই বাংলাদেশে কাজ করছেন। আবার বাংলাদেশ থেকেও অনেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ভারত থেকে পণ্যও কিনছে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার সঙ্গে ভারতের স্বার্থ জড়িত রয়েছে বলে মনে করছেন জেনারেল ওয়াকার।
বস্তুত, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। তার পর থেকে হাসিনা ভারতে রয়েছেন। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। এই অবস্থায় বাংলাদেশ চাইছে হাসিনাকে সে দেশে ফেরাতে। পাশপাশি হাসিনা সরকারের পতনের পর সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বেশ কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। তা নিয়ে মুখ খুলেছে ভারতও। যদিও সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই রয়েছেন বলে দাবি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। সম্প্রতি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তিনি এখন বন্দি রয়েছেন চট্টগ্রাম জেলে। তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দু’দেশেই সাধারণ মানুষের একাংশের একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই টানাপড়েনের আবহে, ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী ঢাকায় গিয়ে ইউনূস প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকও করেন। বৈঠকের পরে দু’পক্ষই জানায়, তারা একে অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়।