সেনার কপ্টারে পর্যটকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্যোগের মেঘ কাটিয়ে আবহাওয়া অনুকূল হতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আকাশপথে উত্তর সিকিম থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করছে সেনা। বিপর্যয়ের প্রথম দিন থেকে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে তারা। সোমবার সকাল থেকে মোট ১৪৯ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর। এখনও অনেকে আটকে রয়েছেন। সংখ্যাটা ঠিক কত, তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তবে সেনা সূত্রে খবর, এখন তাদের পাখির চোখ উত্তর সিকিমের পর্যটক-সহ বাসিন্দাদের উদ্ধার করা।
সোমবার পূর্ব সিকিমের পাকিয়ং বিমানবন্দর থেকে সেনার একের পর এক হেলিকপ্টার উত্তর সিকিমের দিকে উড়ে গিয়েছে। চলেছে উদ্ধারকাজ। এক পর্যটকদের কথায় , ‘‘পূব আকাশে হেলিকপ্টার দেখেই ভেবেছিলাম এ বার ঘরে ফেরার পালা।’’ সেনার তরফে দেওয়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উত্তর সিকিমের বিপর্যস্ত এলাকার বাসিন্দাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ২,০০০। যাঁদের মধ্যে ৬৩ জন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন। তবে তাঁদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী থেকে ওষুধপত্র সঠিক সময়ে দিচ্ছে সেনা। এ-ও জানানো হয়েছে, সোমবার পর্যন্ত মোট ১৪৯ জন পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। উত্তর সিকিমের চতেন থেকে ২৯ জন এবং লাচুং থেকে ১২০ জনকে উদ্ধার করে গ্যাংটকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের মঙ্গলবার সিকিম সরকারের বাসে করে লাভা, গরুবাথান হয়ে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। উত্তর সিকিমের গ্রামের মধ্যে সংযোগকারী যে সেতু এবং রাস্তাগুলো ভেসে গিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে সংযোগের কাজ করছে সেনা। চটজলদি সেই সব এলাকার মধ্যে সড়ক পথেই সংযোগ করা যাবে। এয়ারলিফ্ট ছাড়াই সড়কপথে বহু পর্যটককে উদ্ধারের কাজ চলেছে সোমবারও।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সিকিম আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে ফিরবে বলে তাঁরা আশাবাদী। এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘যে ভাবে ভারতীয় সেনার বিভিন্ন ব্যাটেলিয়ন কাজ করছে, তাতে সিকিমের অবস্থা স্বাভাবিক হতে বেশি সময় লাগবে না।’’
সেনার কপ্টারে ফিরে আসা স্মৃতা ইরানি নামে এক পর্যটক বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে সেনা যে ভাবে পাশে থেকেছে তা অভাবনীয়। যে হোটেলে ছিলাম, সেখানেও খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল। একের পর এক হোটেলকর্মী হোটেল ছেড়ে পরিবারের কাছে পৌঁছচ্ছেন। আমাদেরও সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে ভারতীয় সেনা।’’ অখিলেশ শর্মা বলে আর এক পর্যটকও সেনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘‘বেনারস থেকে ঘুরতে এসেছিলাম। যে বিপর্যয় চোখের সামনে দেখলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কিন্তু সেনা যে ভাবে পাশে থেকেছে, তাতে আতঙ্ক অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।’’ আমদাবাদের বাসিন্দা পঞ্চল মিত্তল নামে এক পর্যটকের কথায়, ‘‘ধন্যাবাদ জ্ঞাপন করে সেনাকে ছোট করা হবে। ওঁদের স্যালুট। যে পরিস্থিতির মধ্যে তাঁরা আমাদের প্রাণে বাঁচিয়ে ফেরালেন, তা শুধু ওঁরাই পারেন।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ছোট ছোট গ্রামগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। উত্তর সিকিম বাদে পুজোর আগেই সিকিমের পরিস্থিতি বদলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আবার পর্যটকেরা শীঘ্র বেড়াতে আসতে পারবেন বলে আশাবাদী অনেকে। তবে উত্তর সিকিমের তৈরি হতে খানিকটা সময় লাগবে। রাজ্য ইকো ট্যুরিজম দফতরের চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, ‘‘খুব তাড়তাড়ি বাকি পর্যটকেরা ঘরে ফিরবেন। সেনার বিভিন্ন ব্যাটেলিয়ন যে ভাবে কাজ করছে, তা অতুলনীয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে চলেছে সিকিম সরকারও।’’