ধৃত চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
দিনহাটা পুরসভায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন গৌরীশঙ্কর মহেশ্বরী। ঠিক তার পরের দিন, মঙ্গলবার পুরসভার দুর্নীতি মামলায় গ্রুপ ডি-র কর্মচারী উত্তম চক্রবর্তীকে গ্রেফতারির খবর এল। তবে দিনহাটা থানার পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার মধ্যরাতে উত্তমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁকে দিনহাটা আদালতে হাজির করানো হয়।
দিনহাটা পুরসভার ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে বাড়ির প্ল্যান পাশ করিয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ওই টাকা পুরসভার অ্যাকাউন্টে জমা করেননি। আবার পুরসভার খাতাতেও ওই প্ল্যান পাশের কোনও রেকর্ড রাখা হয়নি। কিন্তু ওই সকল বাসিন্দাকে বিলের রসিদ দেওয়া হয়েছিল। পুরসভার সদ্যপ্রাক্তন চেয়ারম্যান ওই রসিদ নকল বলে দাবি করার পরে শুরু হয় বিতর্ক। পুরসভার চেয়ারম্যানের পদ থেকে তৃণমূলের গৌরীশঙ্কর সরে দাঁড়ান।
মঙ্গলবার পুরসভার পক্ষ থেকে ‘আপন ঘর ভবন’-এ একটি ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। ২০২১ সাল থেকে যাঁরা দিনহাটা পুরসভায় বাড়ির প্ল্যান পাশ করিয়েছেন, তাঁদের সকলের ‘প্ল্যান ভেরিফিকেশন’ হয়। সেখানেও বেশ কয়েকটি এমন ঘটনা পাওয়া গিয়েছে, যেখানে প্ল্যান পাশ হয়েছে। কিন্তু পুরসভার কাছে রেকর্ড নেই। কিন্তু বাড়িমালিকদের কাছে রসিদ রয়েছে। ক্যাম্পে দিনহাটা পুরসভার বিভিন্ন আধিকারিক উপ-পুরপতি-সহ উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ নিজেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। যাতে ২০২১ সালের পর থেকে যারা প্ল্যান পাশ করিয়েছেন, তাঁরা এসে ভেরিফিকেশন করে যেতে পারেন। এখানেও বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে দেখা গিয়েছে, প্ল্যান পাশ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রেকর্ডে কিছু নেই। অর্থাৎ ভুয়ো ভাবে প্ল্যান পাশ হয়েছে। আবার রেকর্ড খাতায় একটি নম্বর রয়েছে, সেটি দিয়ে তিনটি প্ল্যান পাশ করানোর ঘটনাও ঘটেছে। মানুষ যাতে তাঁদের অভিযোগগুলো খোলাখুলি ভাবে করতে পারেন, যাতে আলোচনা হয়, সেই কারণে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি নিজেও উপস্থিত থেকেছি।’’
পুরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই দুর্নীতিতে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের কেউ ছাড় পাবেন না। উত্তমকে আদালতে হাজির করানো হলে তাঁর ১৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। দিনহাটা মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী নীহাররঞ্জন গুপ্ত বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) রাতে উত্তম চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু আদালত ১৩ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। অভিযুক্তকে আগামী ১ জানুয়ারি পুনরায় আদালতে হাজির করার আদেশ দেন বিচারক।’’