গৌরীশঙ্কর মহেশ্বরী। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই পদত্যাগ করলেন কোচবিহারের দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর মহেশ্বরী। যদিও পুরো ঘটনার জন্য তিনি পুরসভার এক কর্মীকে দায়ী করেছেন। এ নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করল বিজেপি।
দিনহাটা পুরসভা এলাকায় বাড়ির প্ল্যান পাশ করানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছে দীর্ঘ দিন ধরে টাকা নেওয়া হলেও সেই টাকা পুরসভার অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি বলে অভিযোগ ওঠে। কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয় বিজেপি-সহ বিরোধীরা। জানা যায়, বাড়ির প্ল্যান পাশ করানোর জন্য যাঁরা দিনহাটা পুরসভায় আসতেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন দিনহাটা পুরসভার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী উত্তম চক্রবর্তী। প্ল্যান পাশের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিলে রশিদ ধরাতেন তিনি। বাড়ির প্ল্যান পাশের কাগজও প্রদান করা হত। কিন্তু সম্প্রতি একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে জানা যায়, ওই রশিদ ভুয়ো। তাঁর সই জাল করা হয়েছে বলে দাবি করেন দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর। তিনি দাবি করেন, পুরসভার ওই কর্মীই এই কাণ্ডে যুক্ত। বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। কিন্তু বিষয়টি জানার পরে পুরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাই পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তৃণমূলের গৌরীশঙ্কর বলেন, ‘‘ওই গ্রুপ ডি-র কর্মচারী পুরসভার নকল রশিদ ছাপিয়ে আমার সই জাল করে মানুষকে দিয়েছেন। এত দিন এ নিয়ে কিছুই জানতাম না আমি। কিন্তু কিছু দিন ধরে বেশ কয়েক জন আমায় এ নিয়ে অভিযোগ জানান। আমরা তদন্ত করে দেখি, পুরসভার বাইরে কোনও একটা চক্র কাজ করছে। পুরসভার যে সিল রয়েছে সেটা, এবং আমার সই জাল করা হয়েছে। তথ্য উদ্ঘাটন করার জন্য দিনহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’
কিন্তু কেন তিনি পদত্যাগ করছেন? গৌরীশঙ্করের জবাব, ‘‘আমি মনে করি, আমি যদি এই চেয়ারে বসে থাকি এবং তদন্ত হয় তা হলে মানুষ মনে করবেন চেয়ারম্যান নিজের পদে থেকে তদন্ত করিয়েছেন। আমি চাইছি, তদন্ত সুষ্ঠু ভাবে হোক। নিশ্চয়ই আমার কোথাও ব্যর্থতা রয়েছে। না হলে মানুষ কেন প্রতারিত হলেন? আমার বিবেক আছে। তাই পদ ছাড়লাম। পুলিশ তদন্ত করবে। পুলিশের যাঁকে মনে হবে, তাঁকেই ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পারে। আমাকেও ডেকেছে। আমি যাব। আমার কাছে যা যা তথ্য জানতে চাইবে, জানাব।’’
এ নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘গৌরীশঙ্কর মহেশ্বরী তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেছেন। এটা বলা যেতে পারে যে, তিনি সৌজন্য এবং সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। দল (তৃণমূল) দলের মতো করে বিষয়টিতে নজর রাখছে। এই বিষয়ে দল হস্তক্ষেপ করবে না।’’ যদিও বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। কোচবিহারের বিজেপি জেলা সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন, ‘‘তৃণমূল দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এখন সাধারণ মানুষের ‘আইওয়াশ’ করার জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন। সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমরা চাইছি, ঘটনার ঠিকঠাক তদন্ত হোক এবং সত্য প্রকাশ্যে আসুক। কবে থেকে এই দুর্নীতি শুরু হয়েছে সেই তথ্য জানুক সবাই।’’