শান্তিতেই মিটল পাহাড়ের ভোট। নিজস্ব চিত্র।
এক দশক বাদে জিটিএ ভোটে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন পাহাড়বাসী। বৃষ্টিভেজা রবিবারে ঐতিহ্য মেনেই উৎসবের মেজাজে ভোট হয়ে গেল ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)’-এর। ৪৫ আসনের জিটিএ ভোটে এ বার লড়াই হামরো পার্টি ও ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মধ্যে। লড়াইয়ে ছিল সিপিএম, তৃণমূলও। পাহাড়ে ভোট হল কিন্তু দেখা গেল না সেই চেনা দৃশ্য, ভোট দিলেন না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম) প্রধান বিমল গুরুং। বিজেপি-ও অংশ নেয়নি ভোটে। পাহাড়ে ভোট শেষ হয়েছে বিকেল ৪টেয়, তখনও পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫৬.৫ শতাংশ।
২০১১-য় পিনটেল ভিলেজে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির তৃতীয় পক্ষ হিসেবে জিটিএ চুক্তিতে সই করেছিলেন জিজেএম প্রধান বিমল। ১০ বছর পর সেই জিটিএ-র দ্বিতীয় ভোটে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অনুপস্থিত সেই বিমল। জিটিএ ভোট বাতিলের দাবিতে কিছুদিন আগে পাহাড়েই অনশন শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। আদালতও ভোট প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপে অস্বীকার করে। রবিবার সেই ভোটই সম্পন্ন হল।
পাহাড়ে রবিবাসরীয় ভোটের লড়াই সীমাবদ্ধ ছিল অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি এবং অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার। হামরো পার্টির প্রার্থী ছিল ৪৫ টি আসনেই, অন্য দিকে অনীত ৩৬ আসনে প্রার্থী দেন। বাকি আসনগুলোতে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন অনীত। সিপিএম ১২টি আসনে এবং তৃণমূল লড়েছে ১০টি আসনে। জিটিএ ভোটে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, এ বারের লড়াই থেকে সরে বিজেপি ও জিজেএমের সরে দাঁড়ানো। পাহাড়ের রাজনীতির দুই অন্যতম ‘স্টেকহোল্ডার’ লড়াই ছেড়ে সরে দাঁড়ানোয় স্মরণাতীত কালের মধ্যে সম্ভবত এই প্রথম বহুমুখী লড়াইয়ের মেজাজে ভোট হল উত্তরের পাহাড়ে।
পাহাড়ে একই সঙ্গে রচিত হল ইতিহাসও। স্বাধীন ভারতের নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথম ভোট হল ৭,৫৯০ ফুট উচ্চতায়। এর আগে এত উচ্চতায় ভোটকেন্দ্র হয়নি। বাংলার উত্তরতম স্থান, বাংলা ও সিকিম সীমানায় দার্জিলিংয়ের গোর্খে ও সামানদেন গ্রামের ৬৫টি পরিবার নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন বুথে গিয়ে।
গ্রামের বাসিন্দা চিম্মা গোর্খে বলেন, ‘‘ভোট আগেও হয়েছে। কিন্তু সেটা অন্য ভাবে। কিন্তু এবার প্রথম গ্রামে বুথ হল, সেখানে গিয়ে ভোট দিলাম। আর পাঁচ জন ভারতীয় নাগরিকের মতোই আমরা নিজেদের ভোট দিতে পেরে খুব খুশি হয়েছি।’’
সব মিলিয়ে দার্জিলিংয়ের অন্যতম রঙিন চরিত্র বিমল গুরুং ভোট বয়কটের ডাকেই অনড় থাকলেও, উৎসবের মেজাজেই ভোট শেষ হল পাহাড়ে। অন্য দিকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটও মিটেছে মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই। বিক্ষিপ্ত গোলমালের অভিযোগ অবশ্য উঠেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে গাজোয়ারির অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা। অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।