একনাথের দাবি, খেলা শেষ উদ্ধবের! গ্রাফিক— সনৎ সিংহ।
মুম্বইয়ে দাঁড়িয়ে যতই তর্জন-গর্জন করুন উদ্ধব ঠাকরে, সঞ্জয় রাউতরা, প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে গুয়াহাটির বিলাসবহুল হোটেলের আরামকেদারায় বসে বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের নেতা একনাথ শিন্ডে বলছেন, উদ্ধবের খেলা শেষ! অন্তত সাধারণ পাটিগণিতের অঙ্কে এখনও পর্যন্ত শিন্ডের দাবি না মানার কোনও কারণ দেখছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে গুয়াহাটির হোটেলের পথে রওনা হয়ে গিয়েছেন উদ্ধব সরকারের অষ্টম মন্ত্রী উদয় সামন্ত।
মুম্বইয়ে ইতিমধ্যেই বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের বাড়ি ও কার্যালয়ে ভাঙচুর শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্য জুড়ে তাঁদের ‘গদ্দার’ আখ্যা দিয়ে পথে নেমেছে উদ্ধব শিবির। একনাথের ছবি, পোস্টারে কালি লেপা চলছে, শিবসৈনিকদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বিদ্রোহী বিধায়কদের পরিবার বা অনুগামীদের বাড়ি, অফিসও। এই পরিস্থিতিতে চাপ বাড়তে থাকে শিন্ডের উপর। সূত্রের খবর, সেই সময় শিন্ডে বাকি বিধায়কদের প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি সবার পরিবারের জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। তার পরেই অমিত শাহের মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ১৫ জন বিধায়কের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেই বিধায়কদের বাড়ির সামনে মোতায়েন হয় আরও বেশি সংখ্যক সিআরপিএফ। মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল চিঠি লিখে শিন্ডে শিবিরের লোকজনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেন মুম্বই পুলিশের কমিশনারকে।
এ দিকে গুয়াহাটির বিলাসবহুল হোটেলে মহারাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ও প্রযুক্তি শিক্ষা মন্ত্রী উদয় সামন্তের আগমন-সংবাদে খুশির হাওয়া। হোটেলেই শিন্ডের উপস্থিতিতে ভান্ডারার নির্দল বিধায়ক নরেন্দ্র ভোন্দেকরের জন্মদিন পালন করা হয়। কেক কেটে একে অপরকে খাইয়ে দেন বিদ্রোহী বিধায়করা।
দুপুরে আচমকাই হোটেলে আসেন অসমের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কিছুক্ষণ হোটেলে কাটানোর পর বেরিয়ে যায় তাঁর কনভয়। হিমন্ত বলেন, ‘‘বাইরে থেকে এত জন সাংবাদিক এখানে এসেছেন। কয়েক জন বিধায়কও এসেছেন। তাই দেখা করে গেলাম।’’
সূত্রের খবর, বিকেলের দিকে বিধায়করা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেন। সেখানে কোন উপায়ে মুম্বই ফেরা যায়, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। আইনজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলা হয়। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। সূত্রের খবর, হোটেলের বিধায়কদের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে সহমতে পৌঁছনো যায়নি। তা হল, একটি অংশের বিধায়করা বিজেপিতে মিশে যেতে রাজি হয়েছেন, কিন্তু তাতে আপত্তি রয়েছে অন্য অংশের। তাঁরা নিজস্বতা বিসর্জন দেবেন না বলে শিন্ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এই অবস্থায় আলোচনায় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। উদ্ধবের দাবি, বিদ্রোহী শিবিরের অন্তত ২০ জন বিধায়কের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। ঠিক সময় তাঁরা যথাযথ পদক্ষেপ করবেন। সব মিলিয়ে উত্তপ্ত মহারাষ্ট্রের আঁচে তেতে উঠছে গুয়াহাটিও।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।