Tobacco farming Cooch Behar

তামাকে ‘না’, উৎসাহ বিকল্পে

প্রথমে জেলায় চুরুটের তামাক চাষ হলেও পরে ধীরে ধীরে খৈনি বা হুক্কার জন্য যে তামাক লাগে, সেই প্রজাতির উৎপাদন বাড়তে থাকে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৩
Share:

কোচবিহারের বেশ কিছু জায়গায় এখনও তামাক চাষ করা হয়। নিজস্ব চিত্র।

ষাটের দশকে মায়ানমারের সঙ্গে কোচবিহারের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। যার সূত্রটি ছিল তামাক রফতানি ঘিরে। সেই সময়ে মায়ানমারের রাজধানী ছিল রেঙ্গুন (পরে তা ইয়াঙ্গন নামে পরিচিত হয়)। এই রেঙ্গুনে ছিল চুরুটের চাহিদা। শোনা যায়, সেই সময়ে কোচবিহারের দিনহাটার একটি চুরুট কারখানা থেকে চুরুট রফতানি হত রেঙ্গুনে। সমুদ্রপথে কোচবিহার থেকে চুরুট পৌঁছত রাজধানী শহরটিতে। পরে অবশ্য একাধিক কারণে সেই চুরুট কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা বন্ধ হলেও, তামাক চাষ বন্ধ হয়নি জেলায়। যদিও স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলার প্রায় দু’লক্ষ মানুষ তামাক চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও, এই চাষে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ে না। প্রশাসনের দাবি, তামাক থেকে নেশাজাতীয় দ্রব্য তৈরি হওয়ায় তামাকের বদলে বিকল্প চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়।কোচবিহার জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা অসিতবরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী তামাকের বদলে বিকল্প চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। অনেকে তামাক ছেড়ে বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। সেখান থেকেও ভাল আয় সম্ভব।’’

Advertisement

প্রথমে জেলায় চুরুটের তামাক চাষ হলেও পরে ধীরে ধীরে খৈনি বা হুক্কার জন্য যে তামাক লাগে, সেই প্রজাতির উৎপাদন বাড়তে থাকে। কমে যায় চুরুটের তামাকের উৎপাদন। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, ‘‘রেঙ্গুনের চুরুট যেত এখান থেকে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজ্যেও এই তামাকের চাহিদা ছিল। এক সময়ে তামাক চাষের উপরে সরকারের নজর ছিল। সে জন্য দিনহাটায় কেন্দ্রীয় তামাক গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তামাকের কিছু ক্ষতিকর দিকের কথা জানিয়ে চাষে উৎসাহ দেওয়া বন্ধ হয়। গবেষণাগারেরও এখন খারাপ অবস্থা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তামাক থেকে এক ধরনের রাসায়নিক তৈরি করে তা রঙ তৈরির কাজে লাগানো হয়। নিকোটিন বাদ দিয়ে বাকি তামাক কাজে লাগানো যেতে পারে।’’

কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া দিনহাটা, সিতাই, শীতলখুচি, মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জে মূলত তামাক চাষ হয়। চাষিরা জানান, জেলায় মূলত মোতিহারি ও জাতি, রাফার জাতীয় তামাকের চাষ হয়। মোতিহারি থেকে খৈনি বা হুক্কার তামাক হয়। যার চাহিদা গোটা দেশ জুড়েই। তামাক চাষের পরে তা শুকিয়ে নিতে হয়। এর পরেই তা বাজারে বিক্রি করেন কৃষকেরা। দিনহাটা, সিতাইয়ের একাধিক হাটে তামাক বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা ওই তামাক কিনে বাইরে পাঠান।

Advertisement

সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার কোচবিহার জেলা যুগ্ম সম্পাদক আকিক হাসান বলেন, ‘‘তামাক কোচবিহার জেলার একটি অর্থকরী ফসল। এই ফসলের উপর নির্ভর করে অনেক মানুষের রুটি-রুজি চলে। অথচ এই চাষ নিয়ে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এই চাষ নিয়ে নতুন দিশা দেখানো প্রয়োজন।’’
(তথ্য সহায়তা: সুমন মণ্ডল)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement