লাটাগুড়িতে শুরু বেঙ্গল হিমালয়ান কার্নিভাল। — নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঠাসা। প্রতি বছর রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক হিমালয় দেখতে আসেন ভারতে। অপরূপ সেই হিমালয়ের একটি অংশ গিয়েছে বাংলা দিয়েও। হিমালয়ের অন্যান্য অংশের মতো এই অংশের গুরুত্বকেও আকাশছোঁয়া করতে গত চার বছর ধরে চলছে ‘বেঙ্গল হিমালয়ান কার্নিভাল’। চতুর্থ বছরে জলপাইগুড়ি জেলার অরণ্যঘেরা জনপদ লাটাগুড়িতে শুক্রবার শুরু হয়েছে কার্নিভাল। শনিবার কার্নিভালের আসর বসবে কালিম্পংয়ের ঝালংয়ে। রবিবার দার্জিলিং জেলার মিরিকে কার্নিভালের শেষ দিন।
লাটাগুড়ির গভীর জঙ্গল হোক বা ঝালং, মিরিকের পাহাড়ি সৌন্দর্য— একটা সময় ছিল, যখন পর্যটকদের কাছে ‘বেঙ্গল হিমালয়া’ বা হিমালয়ের যে অংশ পশ্চিমবঙ্গের সীমানার মধ্যে, তার একটি আলাদা আকর্ষণ ছিল। কিন্তু ইদানীং হিমাচলপ্রদেশ বা সিকিমের দাপটে সেই আকর্ষণ অনেকটাই ঢাকা পড়েছে। প্রচারের আলো সরে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে এই অঞ্চলের পর্যটন পরিকাঠামো থেকে শুরু করে রসদে। সেই সমস্যা সমাধানে চার বছর আগে শুরু হয়েছিল ‘বেঙ্গল হিমালয়ান কার্নিভাল’। বাংলার হিমালয়কে আরও পর্যটকবান্ধব করতে ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’কে সঙ্গে নিয়ে তাই এগিয়ে এসেছে রাজ্য সরকারের পর্যটন বিভাগ। ইদানীংকালে পর্যটকদের একাধিক অভাব অভিযোগকে পাথেয় করে বিভিন্ন পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। যাঁরা পর্যটকদের সরাসরি পরিষেবা দেন, তাঁদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও অতিথিবৎসল করে তোলার পাশাপাশি, স্থানীয় সংস্কৃতি-সহ খাদ্যাভ্যাস, সবটাই তুলে ধরা হয়েছে কার্নিভালে।
এ বিষয়ে রাজ্যের পর্যটন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘হোমস্টে ট্যুরিজম পলিসি’-সহ ‘গাইড ট্রেনিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশন কোর্স’— পরিষেবা প্রদানকারীদের প্রশিক্ষণ চলছে। এ বছর আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে এই প্রকল্পগুলোর আওতায় আনা হচ্ছে। উৎকর্ষ বাংলার মাধ্যমে গাড়ি চালক, গাইড, হোমস্টে মালিকদের ট্রেনিং এবং সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। যাতে পর্যটকদের আরও সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া যায়।’’
আয়োজক সংস্থা ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি এন্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সম্পাদক সম্রাট স্যানাল বলেন, ‘‘এ বছর আমরা তিনটে পর্যটনক্ষেত্র বাছাই করেছি, লাটাগুড়ি, ঝালং এবং মিরিক। এ গুলি পর্যটকদের কাছে সব সময়ের পছন্দের জায়গা হলেও ইদানীং দেখা যাচ্ছে পর্যটকদের কাছে এই জায়গাগুলোর গুরুত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। এই জায়গাগুলোতে কী করে পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা যায় সেই চেষ্টাই হচ্ছে। মানুষ হিমালয় বললেই ভাবেন হিমাচল বা সিকিম। কিন্তু বাংলারও যে একটা হিমালয় আছে, সেটা কোথাও কম গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলার সেই হিমালয়কেই আবার আকর্ষণের কেন্দ্রে ফেরাতে আমাদের উদ্যোগ।’’