বনকর্মীদের সঙ্গে টহলদারি মিতালির। নিজস্ব চিত্র।
জংলি হাতিগুলো ওত পেতে রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে তারা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে মিতালির উপর হামলা চালাতে পারে। এই আশঙ্কায় রয়েছেন বনকর্মীরা।
শান্ত স্বভাবের মিতালি মাত্র কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রম আর বন্ধুত্বে মন জয় করে নিয়েছে বনকর্মীদের। এই মিতালি হল জলপাইগুড়ির নাথুয়া রেঞ্জ এলাকার জঙ্গলের ১৫ বছর বয়সের কুনকি হাতি। নামের প্রতি সুবিচার করেই তার স্বভার আর কাজ। বনকর্মীরা প্রতিদিন রুটিন মাফিক মিতালির পিঠে চড়ে বন পাহারা দেন। তাঁরা হাতির পিঠে উঠে বনের পশুপাখি থেকে শুরু করে চোরাশিকারিদের গতিবিধির উপর নজর রাখেন। প্রতিদিন জঙ্গলের ভিতর ১০-১৫ কিলোমিটারের মতো পথ ঘুরে গধেয়ারকুঠি বিট অফিসের আস্তানায় ফিরে আসেন। নিয়মিত রেশনও পায় মিতালি। প্রতিদিনের প্রিয় খাবার চার কেজি চাল। মাথায় সরষের তেল নিয়মিত মালিশ করতে হয় বনকর্মীদের।
তবে সম্প্রতি তাকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বনকর্মীরা। জানা গেছে, নাথুয়া জঙ্গলে আস্তানা গেড়েছে বেশ কিছু বুনো হাতি। তারা কুনকি হাতিকে সহ্য করতে পারে না। যে কোনও মুহূর্তে তারা মিতালির উপর আক্রমণ চালাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই নিয়ে বনকর্মীরা সতর্ক থাকলেও যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রতি রাতে দু’জন বনকর্মী রাত জেগে মিতালিকে পাহারা দেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বুনো হাতি ছাড়াও ভয় রয়েছে বাইসনের।
অভিযোগ, অন্যান্য এলাকায় বনকর্মীদের হাতি রাখার আস্তানায় বেড়া (ফেন্সিং)-র ব্যবস্থা থাকলেও মিতালির জন্য নেই। এমনকি মাঝে মাঝে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হয় তাকে। এ ছাড়া রয়েছে খাদ্যের সমস্যা। জানা গিয়েছে, হাতির প্রিয় ঘাস চ্যাপ্টা,মালসা, মধুয়া, ডাডার মতো ঘাস হলেও সেগুলি এই জঙ্গলে পাওয়া যায় না। তাই ১০-১৫ কিলোমিটার মতো জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে পাহারা দিয়ে, ডায়না নদীর তীরে মিতালিকে ঘাস খেতে যেতে হয়।
বনকর্মীদের একাংশ মনে করেন, আশেপাশে এই সমস্ত ঘাসের চাষ করলে মিতালিকে দূরে ঘাস খাওয়ার জন্য যেতে হত না। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মিতালির কৃতিত্বে মুগ্ধ বনকর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষিত এই কুনকি জঙ্গলে চলার সময় এমন ভাবে পা ফেলে, পাশে থাকা বন্যপ্রাণীরাও তার শব্দ পায় না। তার মাহুত সত্যবীর রাভা কথায়, ‘‘একদিন মিতালি এখান থেকে চলে গিয়েছিল। সারাদিন আমরা ছুটাছুটি করে খুঁজেছিলাম। অবশেষে নাথুয়ার বামনডাঙ্গা চা বাগান এলাকায় খুঁজে পেয়েছিলাম। সেদিন চোখে জল এসে গিয়েছিল হাতিটির পাহারারত বনকর্মী মানিক রাভার।’’
নাথুয়ার ডেপুটি রেঞ্জার গজেন বর্মন মিতালি সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, "মিতালিও বনকর্মী। আমাদের সহকর্মী। মিতালি না থাকলে জঙ্গলে পাহারা দেওয়া সম্ভব হত না। জঙ্গলের সুরক্ষায় মিতালির ভূমিকা অপরিসীম।’’
জলপাইগুড়ি অননারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী বলেন, ‘‘মিতালিকে আনা হয়েছিল জঙ্গলের নিরাপত্তা বাড়াবার জন্য কারণ মাঝেমধ্যে গোরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে গদেধারকুঠি গ্রামে গন্ডার চলে আসার প্রবণতা রয়েছে। তবে এ বার মিতালিকে নিয়ে চিন্তা বেড়েছে আমাদের। কারণ সে স্ত্রী হাতি আর এই সময়টা হচ্ছে বন্যপ্রাণীদের প্রজননকালীন সময়। তাই মাঝেমধ্যেই দাঁতাল পুরুষ হাতিরা চলে আসছে পিলখানার আশেপাশে। বন দফতর নজর রাখছে মিতালির উপর।’’