ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।
অরূপ বিশ্বাসের বদলে কি এ বার ফিরহাদ হাকিম! দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের অন্দরে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির কাছে একটি চা পর্যটন রিসর্টে লোকসভার হারের কারণ নিয়ে তৃণমূলের বৈঠক। দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রী ছাড়াও মহিলা, ছাত্র, যুব, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব থাকবেন। তবে শিলিগুড়ি শহরের জনপ্রতিনিধিদের নিয়েই বৈঠক হওয়ার কথা। এ বারের বৈঠকে গ্রামীণ স্তরকে শামিল করা হচ্ছে না বলে খবর। যদিও এটা নিয়ে দলের নেতারা অন্দরে বলছেন, শিলিগুড়ি বিধানসভা তো একটি। এর বাইরে গ্রামীণ দু’টি বিধানসভায় দল বিশাল ভাবে হেরেছে। পর্যালোচনা বৈঠকে গ্রামের নেতৃত্বকে ডাকা দরকার ছিল।
সমতলের দলের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ বলেছেন, ‘‘ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে বৈঠক হবে। ভোট-পরবর্তী পর্যালোচনা হবে। শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব ছাড়া শহরের জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন বলে ঠিক হয়েছে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে কালীঘাটের বৈঠকের পরেই ফিরহাদকে বৈঠকের নির্দেশ দিয়েছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দার্জিলিং জেলায় পুরভোট, পঞ্চায়েত ভোট থেকে বিধানসভা, বিভিন্ন সময় দলের কাজকর্ম পরিচালনা করতে দেখা গিয়েছে অরূপ বিশ্বাসকে। এ বার আলাদা করে ফিরহাদকে পাঠালেন নেত্রী। তবে জেলার নেতারা এ সব নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন না। পাপিয়ার কথায়, ‘‘আমি বিষয়টি বলতে পারব না।’’
দলের নেতাদের একাংশ মনে করছেন, রাজ্য নেতৃত্বকে সাংগঠনিক জরুরি কাজগুলি করতে হবে। নেতানেত্রীদের দিকনির্দেশ করতে হবে। সেই জায়গায় কাউকে ঘিরে দলীয় গোষ্ঠীকোন্দল হলে তা আখেরে দলের ক্ষতি হয়। অতীতে এমন অভিযোগ শিলিগুড়িতে উঠেছে। সেটার পরিবর্তন প্রয়োজন। শিলিগুড়ি সমতলে দলের সংগঠন মজবুত করার কাজটা ঠিকঠাক চলছে না তা পরিষ্কার। পুরভোটে অশোক ভট্টাচার্যকে সরাতে গৌতম দেবকে সামনে রেখে দল ভোটে নেমে সফল হয়। স্থানীয় স্তরের ভোটের রেশ ধরেই পঞ্চায়েত ভোটে শিলিগুড়িতে দল জিতেছে। কিন্তু যখনই লোকসভা বা বিধানসভা আসছে তখনই দলের কঙ্কালসার চেহারা দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ দলে। জনপ্রতিনিধিরা নিজের এলাকায় হেরে যাচ্ছেন। এ জন্য আমূল কিছু সাংগঠনিক বদল প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের আগেই পাহাড়ের নেতারা মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি রিপোর্ট দিয়েছিলেন। তাতে সমতল দলের অনৈক্য, সাংগঠনিক দুর্বলতার অভিযোগ করা হয়েছিল বলে খবর। দলের নেতারা মনে করছেন, এখন দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশ নামেই জেলার পদে আঁকড়ে বসে আছেন। তাঁদের কোনও জনভিত্তি নেই। ভোটের প্রচার, কৌশল ঠিক করা বা এলাকা পড়ে থেকে কাজ করতে পর্যন্ত তাঁদের দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় ফিরহাদ কি ‘নিদান’ দেন, তাই দেখার।