জলপাইগুড়িতে মর্গের বাইরে মৃতের পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের পদ থেকে অবসর নিয়েছিলেন বছরখানেক আগে। ছুটি পেলেই চলে যেতেন পাহাড়ে, জঙ্গলে, নদীর ধারে। জলপাইগুড়ি জেলার গরুমারা জাতীয় উদ্যানে বেড়াতে আসার দিনকয়েক আগেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রতিমা দে। কলকাতার কসবার আবাসনে একাই থাকতেন। যোগাযোগ ছিল দাদা-বৌদি ও অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে। মাসখানেক আগেই প্রতিমা দে ঝাড়খণ্ডে ঝরনা দেখতে গিয়েছিলেন। সদ্য জ্বর থেকে ওঠায় গরুমারায় আসতে নিষেধ করেছিলেন দাদা-বৌদিরা।
প্রতিমা দেবীর ভাইপো উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ছাত্র সৌম্য দে সোমবার জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘পিসি ফোনে বলেছিলেন গরুমারায় আসার কথা। দিনকয়েক আগে জ্বর হওয়ার কথাও বলেছিলেন। পিসিকে বারণই করেছিলাম আসতে। নিষেধ না শোনায় বলেছিলাম, জ্বর আবার এলে জানাতে। প্রয়োজন হলে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করব।’’ প্রিয় জঙ্গলে বেড়াতে এসে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজনেরা।
রবিবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে জঙ্গল সাফারি করে ফেরার পথে দু’টি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যান এই পর্যটক। জখম হন আরও চার পর্যটক-সহ আট জন।
একমাত্র বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন সকালে কলকাতা থেকে বিমানে এসে পৌঁছন দাদা দীপক দে ও বৌদি রঞ্জনা দে। মর্গের সামনে প্রতিমা দেবীর সেজ দাদা দীপক দে বলেন, ‘‘চিরদিনই ভ্রমণপিপাসু ছিল। ওদের একটা ‘গ্রুপ’ও ছিল। এমন ভাবে ওকে হারাতে হবে,
কখনও ভাবিনি!’’
ময়না-তদন্তের পরে এ দিন বাড়ির লোকেদের হাতে মৃতদেহ তুলে দেয় পুলিশ। জলপাইগুড়ি মাসকলাইবাড়ি শ্মশানে বিকেলে দেহ সৎকারের কাজ করেন বাড়ির লোকেরা। দুর্ঘটনায় জখম প্রতিমা দেবীর বান্ধবী সুমিতা দত্তের চিকিৎসা চলছে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। এ দিন বিকেল পর্যন্ত বান্ধবীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি তাঁকে। দুর্ঘটনায় জখম প্রজেশ মল্লিক, তাঁর স্ত্রী মাধুরী ও বোন মীরা মল্লিককে রবিবার গভীর রাতে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ‘রেফার’ করা হয়েছে বলে হাসপাতালের সুপার কল্যাণ খান জানান। শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তাঁদের চিকিৎসা চলছে বলে জানা গিয়েছে।