প্রতীকী ছবি।
বিজেপি নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা থেকে শুরু করে বেআইনি জমায়েত, সরকারি কাজে বাধা, অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্টের মতো একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করল শিলিগুড়ি পুলিশ। সোমবারের ঘটনার পর রাতেই এনজেপি থানায় তিনটি মামলা রুজুর প্রক্রিয়া শুরু হয়। মঙ্গলবার রাতের মধ্যে মামলাগুলি চূড়ান্ত করে কলকাতায় রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, উলেন রায়ের মৃত্যুর ঘটনাস্থল ফুলবাড়ির মার্ডার মোড়, নৌকাঘাট মোড় এবং তিনবাতি মোড়— এই তিনটি এলাকার ঘটনা ধরেই তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা সিআইডির হাতে গেলেও পুলিশের তরফে তদন্ত আপাতত জারি রয়েছে। পুলিশের করা তিনটি মামলায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে ফুলবাড়িতে থাকা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু, সদ্য পদ্ম শিবিরে আসা মিহির গোস্বামীদের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে। বাকি মামলার অভিযুক্তদের তালিকায় নাম রয়েছে, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, তেজস্বী সূর্য থেকে শুরু করে মুকুল রায়, সৌমিত্র খাঁ, রাজু বিস্তা, জয়ন্ত রায়, নিশীথ প্রামাণিক বা জন বার্লাদের মতো সাংসদের।
ময়নাতদন্ত ও পুলিশি রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর মধ্যেই অভিযোগ তুলেছেন, ছররা গুলি চলে এমন আগ্নেয়াস্ত্র মিছিলে এনেছিলেন বিজেপির লোকজনেরাই এবং তাঁদেরই কেউ গুলি চালিয়েছেন।
পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, বিজেপি রাজবংশী একজনকে নিজেরা মেরে রাজনীতি করছে।
যদিও দিলীপবাবুরা এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, সব ক’টি অভিযোগ সাজানো, ভিত্তিহীন। দলের জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়ের অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা গুলি চালালে সেটা উলেন রায়ের পিঠে লাগত। পুলিশ সামনে থেকে গুলি চালিয়েছে বলে বুকে লেগেছে। পুলিশের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনার দাবিও করেছেন সাংসদ।
আবার দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর দাবি, কাঁদানে গ্যাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ তো ছিলই। তেমনই, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিকের নির্দেশে তৃণমূল কর্মীরা পুলিশের পোশাক পরে বিজেপি কর্মীদের উপর গুলি চালিয়েছে। যা শুনে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, ওদের কথা শুনলেই হাসি পায়। নিজেরা নিজেদের লোক মেরে রাজনীতি করছে। আর মুখে সর্বক্ষণ মিথ্যা কথা।
পুলিশ সূত্রের খবর, বেসরকারি নার্সিংহোমের প্রাথমিক রিপোর্ট এবং সোমবার করা ময়নাতদন্তে রিপোর্টে পরিষ্কার, শটগান বা ছররা বন্দুকের গুলি থেকেই উলেনের মৃ্ত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি, তাদের কাছে ছররা বন্দুক থাকে না। পর্যটনমন্ত্রীর দাবি, ব্যারিকেডের সামনে উলেন অন্য বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুসারে ১২ ফুটের মতো দূরত্ব থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। ব্যারিকেডের ওপার থেকে শটগান হাতে নিয়ে কেউ গুলি করলে, তা দেখা যেত। আর বিজেপি কর্মীরা স্বাভাবিক ভাবে পরে সেখানে ছুটে যেতেন। তা না হয়ে ভিড়ের মধ্যে থেকেই গুলি চালানো হয়েছে। তাই উলেন মাটিতে পড়তেই কর্মীরা তাঁকে নিয়ে পিছনে নার্সিংহোমের দিকে দৌড়তে থাকেন।
তদন্তকারী অফিসারদের কথায়, ঘটনাস্থলে আরও তিন জন ছররা গুলিতে সামন্য জখম হয়েছেন বলে শোনা গিয়েছে। ঘটনার পর রাতেই তাঁরা কোথাও চলে গিয়েছেন।