—প্রতীকী চিত্র।
মালদহের গাজলে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনবিইউ) এক ছাত্রের অপমৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করল পরিবার। মঙ্গলবার গাজল থানায় লিখিত এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য সিএম রবীন্দ্রনের কাছে ই-মেলে অভিযোগ করেন মৃত ছাত্র উত্তম মার্ডির জেঠা জোনাস মার্ডি। তাঁর দাবি, “উত্তমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের সিনিয়ারদের একাংশ শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার করেছে। তাকে র্যাগিং করা হয়েছে। যা মেনে নিতে না পারায়, উত্তম আত্মহত্যা করে।” অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) র্যাগিংয়ের অভিযোগের খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট তলব করে। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটির রিপোর্ট পাঠানো হয় ইউজিসির কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত বলেন, ‘‘র্যাগিংয়ের তথ্য-প্রমাণ নেই। ওই ছাত্র যে তিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, কাউকে কিছু জানাননি।’’ সোমবার রাতে উত্তমের শেষকৃত্য হয়।
গাজলের কচুয়া গ্রামে উত্তমের জেঠার বাড়িতে এই দিন বিকেলে যান আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের রাজ্য সহ-সভাপতি মোহন হাঁসদা। তিনি বলেছেন, “উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, আমরা আন্দোলনে নামব।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গাজলের দীনেশ টুডু দলীয় নেতৃত্বদের নিয়ে মৃতের বাড়িতে যান। তিনি বলেন, “পরিবারটির পাশে আছি।” রাতে জেলা তৃণমূল সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষও পরিবারটির বাড়িতে যান। পরিবারটিকে সব সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনিও বলেন, “র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ মেনে নেওয়া যায় না।”শোকস্তব্ধ পরিবার। মৃতের জেঠতুতো দিদি পাঞ্চালী মার্ডি বলেন, “ভাইয়ের মৃত্যুতে দোষীদের শাস্তি চাই। র্যাগিংয়ে ভাই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।”
অস্থায়ী উপাচার্যের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, পরিবারের তরফে উপাচার্যকে এ দিন যে মেল করা হয়েছে, তাতে দাবি করা হয়েছে, তাকে হস্টেলে রাতে শারীরিক, মানসিক ও যৌন হেনস্থা করা হয় বলে উত্তম পরিবারের কাছে জানিয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর হস্টেলে ১০৩ নম্বর ঘরে যেখানে অন্য দুই ছাত্রের সঙ্গে তিনি থাকতেন, তাঁদের এবং হস্টেলের প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের একাংশের লিখিত বয়ানও সংগ্রহ করা হয়েছে। তাঁদের তরফেও দাবি করা হয়েছে, এমন ঘটনা তাঁদের জানা নেই।
ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র তরফে দাবি, পরিচয়পর্বের নাম করে ‘সিনিয়র’ ছাত্রেরা নতুন ছাত্রদের ডেকে ‘নানা কিছু’ করে বলে শোনা যায়। ঘটনার বিশদ তদন্তের দাবিতে রেজিস্ট্রারকে স্মারকলিপি দেয় তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি’র আহ্বায়ক পরীক্ষাসমূহের নিয়ামক দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘তদন্তে জানা গিয়েছে, র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। ইউজিসি-র কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’’ মালদহের পুলিশ সুপার বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।”