করিডরে লোকালয় বাড়াচ্ছে মৃত্যু: সমীক্ষা

পথে বাধা, তাই বসতে হাতি

শিলিগুড়ির মহানন্দা অভয়ারণ্য থেকে ডুয়ার্সের আপালচাঁদ বন পর্যন্ত হাতি যাতায়াতের একটি করিডর রয়েছে।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫৭
Share:

ফাইল চিত্র।

হাতির পথে মানুষ, নাকি মানুষের বসতে হাতি— বিপদের মূলে কোনটা? উত্তরবঙ্গের পরিবেশবিদ ও প্রশাসনের কাছে এটাই এখন প্রধান প্রশ্ন। বিশেষ করে সোমবার রাতে গাওনা ওরাওঁ ও তাঁর স্ত্রী কুয়াঁরির মৃত্যুর পরে এই প্রসঙ্গ আবার সামনে চলে এসেছে। ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া ও স্থানীয় একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের যৌথ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত দশ বছরে উত্তরবঙ্গে হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ার ফলে যত মৃত্যু হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি মানুষ মারা গিয়েছে হাতির যাতায়াতের রাস্তায় ঢুকে পড়ে। পরিবেশবিদেরা বলছেন, হাতির এলাকায় মানুষের যাতায়াত, বসবাস কতটা বেড়েছে, তার ইঙ্গিত মেলে এই পরিসংখ্যান থেকেই। তাই হাতিও পথ বদলে ঢুকে পড়ছে মানুষের বসতে। তার ফলেও প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ছে।

Advertisement

গত দশ বছরে উত্তরবঙ্গে ১৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে হাতির হানায়। যৌথ সমীক্ষাটিতে আরও বলা হয়েছে, মেচি নদীর পাড় থেকে সঙ্কোশ নদী পর্যন্ত বিস্তৃত জনপদ ও জঙ্গলে মোট ১৩টি হাতি যাতায়াতের রাস্তা তথা করিডর রয়েছে। যার প্রায় সবগুলিতেই বসতি হয়ে গিয়েছে। তাই লোকালয়ে হাতি ঢুকে পড়ার ঘটনা বাড়ছে। সোমবার রাতে ময়নাগুড়ির যাদবপুর চা বাগানের ঘটনাও একই কারণে, মনে করছে বন দফতর।

শিলিগুড়ির মহানন্দা অভয়ারণ্য থেকে ডুয়ার্সের আপালচাঁদ বন পর্যন্ত হাতি যাতায়াতের একটি করিডর রয়েছে। তিস্তা পার হয়ে হাতির দল এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যায়। সম্প্রতি এই করিডরে সুন্দরিবাড়ি এবং টোটগাঁও নামে দুটি জনবসতি গড়ে উঠেছে। হাতি ঠেকাতে বসতির চারপাশে বেড়া দেওয়া হয়েছে। নিজেদের স্বাভাবিক চলাচলের রাস্তায় বাধা পেয়ে হাতিও পথ বদলাচ্ছে এবং মানুষের সঙ্গে সংঘাত ঘটছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণী) রবিকান্ত সিংহ বলেন, “উত্তরবঙ্গে প্রতি বছর গড়ে ৪০ জন করে হাতির হানায় মারা যাচ্ছেন। কোনও ক্ষেত্রেই হাতি কিন্তু নিজে থেকে কারও বাড়ি ঢুকে লোক মারেনি। বরং উল্টোটাই হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হাতির চলাচলের রাস্তায় কোনও বাধা থাকা ঠিক নয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁদের হঠাৎ সরিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়।”

Advertisement

জলপাইগুড়ির জঙ্গল লাগোয়া বেশিরভাগ বাগানই হাতি চলাচলের করিডর। শিলিগুড়ি লাগোয়া এলেনবাড়ি, ওয়াশাবাড়ি থেকে নেপুচাপুর, বড়দিঘি, মিনগ্লাস-সহ ১১২টিরও বেশি চা বাগান রয়েছে। ইংরেজ আমলে জঙ্গলের আশেপাশে পত্তন হওয়া বাগানগুলির মালিকদের শর্ত দেওয়া থাকত, বাগিচায় বুনোদের যাতায়াতের রাস্তা ছেড়ে রাখতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই শর্ত লোপ পেয়েছে। শ্রমিকের সঙ্গে বেড়েছে বসতিও। সমীক্ষাকারী সংগঠনের তরফে শ্যামাপ্রসাদ পাণ্ডে বলেন, “প্রতিটি হাতি করিডরে বসতি, নির্মাণ গড়ে উঠেছে। বাধা পেয়ে হাতিই লোকালয়ে আসছে।”

বন কর্মীদের একাংশের দাবি, হাতি চলাচলের রাস্তা থেকে বসতি উচ্ছেদ করার চেষ্টা করলে উল্টো ফল হয়েছে। উল্টে রাজনৈতিক কোপে পড়তে হয়েছে। এক বনকর্মীর তাই কটাক্ষ, “হাতির যদি ভোটাধিকার থাকত, তবে ওদের চলাফেরার রাস্তাও বাধামুক্ত হত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement