জলপাইগুড়ির রাস্তায় ইস্টবেঙ্গল - মোহনবাগান ক্লাবের সমর্থকদের মিছিল। ছবি - সন্দীপ পাল।
খেলা নিয়ে নিত্য বিরোধ। তর্কে কখনও মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরাই একই পতাকার দু’দিক ধরে মিছিলে হাঁটলেন। জলপাইগুড়ির রাস্তায় পাশাপাশি হাতে ধরা থাকল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের পতাকা। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দু’দলের সমর্থকেরা স্লোগান তুললেন, ‘আরজি করের বিচার চাই। ফুটবলও খেলতে চাই।’
জলপাইগুড়ির সমাজপাড়ায় ইস্টবেঙ্গল ফ্যান ক্লাবের সামনে থেকে বের হল দু’দলের সমর্থকদের মিছিল, শেষ হল মোহনবাগানের নামে নামাঙ্কিত রাস্তায়। রবিবার সন্ধ্যেবেলায় মিছিল শুরু হয়ে কিছুটা এগোতেই নামে বৃষ্টি, তাতেও মিছিল থামেনি। বৃষ্টি মাথায় এগিয়ে যায় মিছিল। মিছিলের সামনেই ছিল জলপাইগুড়ির একটি খুদে মেয়েদের ফুটবল দল। জার্সি পরা মেয়েরা সঙ্গে এনেছিল ফুটবলও। ওই দলের অধিনায়িকা রিয়া রাউত বলে, “আমরা এসেছি ডার্বি ম্যাচ বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে। কেন খেলা বন্ধ করে দেওয়া হল?” ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্য সৌমিক মজুমদার বলেন, “আমরা দু’দলের সমর্থকেরা এক হয়েছি ফুটবলের স্বার্থে এবং আরজি করের চিকিৎসক মেয়েটির বিচার চাইতে।”
যুবভারতীতে ডার্বি হবে না ঘোষণার পরেই জলপাইগুড়িতেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকেরা আলোচনা করে মিছিলের সময়-পথ ঠিক করেন। ইস্টবেঙ্গল সমর্থক সৌমিক বলেন, “আরজি কর এবং ফুটবল নিয়ে মোহনবাগান সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করতে কোনও দ্বিধা হয়নি। এটাই ফুটবল বোধ।” মোহনবাগান সমর্থক সুমন সরকার বলেন, “আমাদের দু’দলের পতাকার রং যাই হোক, হৃদয় একই ভাবে স্পন্দিত হয়। আমরা আরজি করের বিচার চাই। ফুটবল যেন আর বন্ধ না হয় তাও আমাদের দু’দলেরই দাবি।”
জলপাইগুড়িতে এ দিন অরাজনৈতিক উদ্যোগে মেয়েরাও মিছিল করেছে আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে। একটি সংগঠনের উদ্যোগে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলে মেয়েদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিলে পথ চলতি অনেকেই যোগ দেন। মিছিলের শেষে বাম নেতা-কর্মীদের কয়েকজনকেও দেখা গিয়েছে।
প্রতিবাদ ছড়িয়ে যায় জলপাইগুড়ির বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায়। স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়ারা এক জোট হয়ে ‘বিচার চাই’ স্লোগান তুলে বেরুবাড়ির সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে বিক্ষোভ দেখায়। মিছিলে শামিল হন সাধারণ নাগরিকেরাও। স্কুলের সামনে মাঠে বসে প্রতিবাদ সভায় তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিও ওঠে। এ দিন সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ির সমাজপাড়ায় শঙ্খ বাজিয়ে প্রতিবাদ জানান একদল মহিলা। রাত ৯টা নাগাদ জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সামনে মেয়েদের ডাকে আরও একটি মিছিল বের হয়। সে মিছিলে স্কুল পড়ুয়া মেয়ের হাতেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পোস্টার দেখা গিয়েছে। রাত ৮টায় সদর হাসপাতালের সামনে জমায়েত হয় বেশ কিছু ছাত্রী। পরে শহর পরিক্রমা করে কদমতলা মোড়ে হাজির হয়। সেখানে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভে শামিল হয় ছাত্রীরা। প্রায় আধঘণ্টা অবরোধ করা হয় রাস্তা। এর জেরে শহরে ব্যপক যানজট হয়। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।