ফাইল চিত্র।
সেটা ২০১৪-১৫ সাল। নতুন বিয়ে করেছি। বউকে নিয়ে ঘুরতে বার হব পুজো দেখতে। হঠাৎ সন্ধের দিকে ফোন। ব্যস, পুজো দেখা রইল পড়ে। আমি রোগীকে নিয়ে চললাম হাসপাতালে। সে দিন আর বাড়ি ফিরিনি। জাতীয় সড়কের ধারে একটা গাছের নীচে গাড়ি রেখে ঘুমিয়েছিলাম। অষ্টমীর রাতটা এই ভাবেই কেটে গেল।
আর নবমী? সেটা কাটল বউয়ের অভিমান ভাঙাতে। ওকে বোঝালাম, আমাদের জীবন এমনই। ও বুঝতে পারল শেষে। তার পর থেকে ওকে সব সময়ই পাশে পেয়েছি।
বলতে কী, আমরা যারা অ্যাম্বুল্যান্স চালাই, তাদের কী পুজো কী দীপাবলি, সব সমান। কখন যে রোগী নিয়ে যেতে ডাক পড়বে, কে বলতে পারে। এখন আমার পিছুটান ছেলেটাও। মায়ের অভিমানটাই সেই ছেলে। বাড়ির উৎসবে, অনুষ্ঠানে অনেক সময় আমার থাকা হয় না। দৌড়তে হয় রোগী নিয়ে। তখনই হয় বিপত্তি। মায়ের সঙ্গে ছেলেও অভিমান করে।
গত বছর এই মান-অভিমানেই কেটেছে প্রায় পুরো সময়। তখন করোনা কাল, যখন তখন অ্যাম্বুল্যান্সের ডাক পড়ছে। বিপদ যে কতটা, সেটা প্রথম দিকে বুঝতেও পারিনি। বহু রোগী, যাঁরা সরকারি হাসপাতালে যেতে চাইতেন না, তাঁদের আমি শিলিগুড়ি নিয়ে গিয়েছি। আমার বাড়ির লোকও খুব ভয় পেত। তখনও তো টিকা বার হয়নি। পিপিই কিট পরে অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে হত। কিন্তু তাতেও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা। ছেলে তো এখনও বড় হয়নি। তাই প্রথম দিকে বাড়ি থেকে দূরেই থাকতাম। বাড়ি গেলেও খুব সাবধানে থাকতে হত। পুজোর আগে ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও আমি কোনও ঝুঁকি নিইনি।
তার পরে পুজোর মধ্যেই ডাক এলো। পরিবারকে ছেড়ে রোগী নিয়ে গিয়েছিলাম আলিপুরদুয়ার। অঙ্গে নতুন জামা নয়, পিপিই কিট। পরিবারের সবাই প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছিল। আমি বাড়ি এসে পুরো গাড়ি স্যানিটাইজ় করেছি। পরদিন সকালে ছেলেকে বাড়ির সামনের পুজো মণ্ডপ ঘুরিয়ে দেখিয়েছি।
এ বারে টিকা নিয়েছি। করোনা যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। পরিস্থিতিও বুঝতে পারছি ভালই। তাই ঝুঁকি না নিলেও ইচ্ছে আছে পরিবারকে বাড়তি সময় দেওয়ার।
তবে আবারও বলি, আমি জরুরি পরিষেবা দিই। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে রোগী নিয়ে ছুটে যাই হাসপাতালে। তাতে যদি নিজের ঘরে সময় একটু কম হয়, তবু বলব, আর একটা ঘরে তো আলো জ্বলে ওঠে। এটাই প্রাপ্তি।